নিকষ

(১)

-এখন কোথায় তুই?
:ফেরিতে। পদ্মায়।
-কী করছিস?
:স্বর্ণাপুর বকর বকর শুনছি। প্যানপ্যান করে কান ঝালাপালা করে দিল আমার।
-হা হা হা। শুনতে থাক।
:হাসবি না একদম বলে দিলাম। আমার জ্বালা আমি বুঝতেছি।
-পিচ্চি, তোকে একটা কথা বলি? রাখবি?
:হঠাৎ সিরিয়াস হয়ে গেলি! কী হয়েছে? বল। আমার বুড়িপুর কথা আমি রাখব না, এ হতে পারে?
-রাতে অন্তত ওখানে...
:আবার শুরু করলি! তোকে বলেছি না, এসবে আমার এক ফোঁটা বিশ্বাস নেই। তাই আমাকে এসব বলেও লাভ নেই। রাখলাম। বাই।
-খোদা হাফেজ।

(২)

আমি যে বাড়িতে আছি, সেটা আমাদের গ্রামে তো বটেই আশেপাশের দশ গ্রামে মোটামুটি প্রখ্যাত বাড়ি। ভাল কোন কারণে খ্যাতি না। পোড়া বাড়ি হিসেবে খ্যাতি। সহজ ভাষায় বললে ভুত প্রেত সমৃদ্ধ বাড়ি। একটা ভূতের সাথে এক রাত গল্প করার শখ আমার অনেক দিনের সেই সুবাদেই এখানে আসা।
আমাদের তিন ভাইবোনেরই আসার কথা ছিল। তিন ভাই বোন মানে বুড়িপু, স্বর্ণাপু আর আমি। বুড়িপু সবার বড়। বুড়িপু পড়ে কক্সবাজার মেডিকেল কলেজে আর স্বর্ণাপু পড়ে নোয়াখালী মেডিকেল কলেজে। এই দুই মহা ব্রিলিয়ান্ট বোনের উত্তরসূরি হিসেবে আমি কলেজে ওঠার পর থেকে এই প্রি টেস্ট এক্সাম দেয়া পর্যন্ত আজ অবধি পাশের মুখ দেখি নি। আসার আগে হঠাৎ করে বুড়িপুর কী একটা এক্সাম পড়ে গেল, তার আর আসা হল না।

আসে নি ভাল কথা, কিন্তু শুরু করেছে নতুন যন্ত্রণা। বুড়িপুর ধারণা তার কিছু অতি-প্রাকৃতিক ক্ষমতা আছে। সে স্বপ্নে অনেক কিছু দেখতে পায়। তবে স্বপ্নের একটা সীমাবদ্ধতা আছে। স্বপ্ন দেখতে হলে রাতে ঘুমোতে হয়। কিন্তু, বুড়িপুকে যখন কিছু নিয়ে ভবিষ্যৎবাণী করতেই হবে, তখন সে স্বপ্ন না দেখেও অনেক কিছু বলে দেয়। যেমন আমি বিকেলে সাইকেল রাইডে বের হব। বুড়িপুকে বললাম। কিন্তু, বুড়িপুর আমাকে নিয়ে শপিংয়ে যাবার প্লান। তখন সাথে সাথে বুড়িপু ভবিষ্যৎবাণী করবে, সাইকেল রাইডিংয়ে গেলে আমি অ্যাকসিডেন্ট করব। এই ধরণের, ভবিষ্যৎবাণী করতে তাকে স্বপ্ন দেখতে হয় না। আমার এখান আসা নিয়েও, তার ভবিষ্যৎবাণী আছে। এখানে এলে আমার জীবনের ওপর আঘাত আসবে। নিজে আসতে পারে নি বলে, আমাদের আসা ঠেকানোর পরিকল্পনা। বুঝি বুঝি, সবই বুঝি। পিচ্চিকালে খাইছি সুজি। হুহ!

এই বাড়িটার মূল মালিক একটা জমিদার বংশ। এলাকায় তারা বাবু নামে পরিচিত ছিল। মুক্তিযুদ্ধের সময় সব বিক্রি করে ভারতে চলে গেছে। এখানকার তৎকালীন দারোগা এই বাড়ি কিনে নিয়েছিলেন। তবে থাকতেন না এখানে। যুদ্ধের সময় বাঙালি মেয়েদের এখানে রাখা হত। আর যুদ্ধের পরে মাঝে মাঝে মেয়ে মানুষ নিয়ে আসতেন। তবে তার ছেলে এখানে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে। তার ছেলের সম্পর্কে শোনা যায়, সে সাত খানা বিবাহ করেছিল। বাপ কা বেটা। বাবা যা করার বিয়ে না করেই করেছে। আর ছেলে করেছে বিয়ে করে। জায়েজ ভাবে। তবে, যেহেতু এই বাড়িটা ভৌতিক বাড়ি হিসেবে পরিচিত, তাই তেমন কোন রোমহর্ষক ঘটনা দরকার। সেই কাহিনীটা হচ্ছে, সেই লোক তার স্ত্রীদের খুন করে তাদের কাচা মাংস খেত। পরে তার সাত নাম্বার স্ত্রীর প্রেতাত্মা তাকে খুন করে। এখনও তার সাত স্ত্রী আর সেই লোকের প্রেতাত্মা এই বাড়িতে বাস করে। ইন্টারেস্টিং কাহিনী। আমি ঢাকায় বসে এক দুঃসম্পর্কের চাচাত ভাইয়ের কাছে এই গল্পটা শুনেছিলাম, তখনই বেশি আগ্রহী হয়েছিলাম। এতই আগ্রহী হয়েছিলাম যে এটা নিয়ে একটা গল্প পর্যন্ত লিখেছিলাম। গল্পের নাম ছিল “শোণিতাসিত।” শোণিত মানে রক্ত। অসিত মানে কালো। দু'টো মিলে শোণিতাসিত। মানে কালো রক্ত।

(৩)

বাইরে থেকে এই বাড়িটার রংও কালো। কালো রক্ত লেগে থাকলেও শ্যাওলা আর মসের প্রাচুর্যে সেটা বোঝার উপায় নেই। ভেতরের অবস্থাও খুব বেশি সুবিধের না। তবে কয়েকটা রুম বেশ উন্নত। একেবারে শহুরে ব্যবস্থা। টাইলস করা রুম। বাথরুমে শাওয়ারের ব্যবস্থা। এই অজপাড়াগায়ে এসব ভাবাই যায় না। বোঝাই যায়, দারোগা সাহেব যুদ্ধের সময় কম কামান নি।

“তুই এই বিধ্বস্ত বাড়িতে থাকবি?” পেছন থেকে স্বর্ণাপুর গলায় হঠাৎ চমকে উঠলাম।
একটু ধাতস্থ হয়ে বললাম, “এই অজপাড়াগায়ে তুই এতখানি সুব্যবস্থা কল্পনা করতে পারিস?”
-তার পরও কেমন যেন গা ছমছমে পরিবেশ। বোধ হয় চড়ুইপুর কথাই...
: চুপ করবি?
স্বর্ণাপু আর কথা বাড়াল না। আমিই আবার বললাম
:ওই আমি একেবারে উত্তরের ঘরটায় থাকব। তুই কোনটা?
-রুম পরে ঠিক করা যাবে। আগে বাইরের লোকগুলোকে বিদায় কর।
:বাইরের লোক মানে?
-মানে এই পোড়া বাড়িতে কেউ থাকতে এসেছে এই খবর পুরো গ্রামে ছড়িয়ে গেছে। বাইরে মোটামুটি বাজার বসে গেছে। এই অসীম সাহসী ছেলে মেয়ে দু'টোকে এক পলক দেখার আশায়...
:এই টাইপ ফাইজলামির মানে কী? দাড়া দেখতেছি।

বের হয়ে দেখি, সত্যি সত্যিই বাজার। এত লোকের কী কোন কাজকর্ম নেই? হঠাৎ, দেখি ছোট কাকা আসছে। ভেতরে ভেতরে খানিকটা ঘাবড়ে গেলেও বাইরে সেটা প্রকাশ করলাম না।

ছোট কাকা এসেই ধমকানো শুরু করলেন, “বেশি সাহস হয়ে গেছে না? রাতে বাবুর বাড়ি থাকবে। সাহসী পুরুষ আমার। দারোগার পোলা এসে যখন জবাই করে রেখে যাবে, তখন টের পাবি। এক্ষণই বাড়িতে চল।”
সাথে সাথে ভেতর থেকে স্বর্ণাপুও এসে যোগ দিল, “দেখুন তো কাকা। বেয়াদপটার কি শখ হয়েছে!”

কিন্তু, আমি গো ধরে থাকলাম। আমি এখানেই থাকব। শেষ পর্যন্ত ছোট কাকা পরাস্ত হলেন। বললেন, “সন্ধ্যায় লাঠিয়াল পাঠিয়ে দেবেন বাড়ি পাহারা দিতে।” মানা করতে গিয়ে করলাম না। হয় তো ছোট কাকা আবার ক্ষেপে যাবেন।

(৪)

-ছোট। অ্যাই ছোট। ছোট শুনছিস?
:কী হয়েছে? রাতে একটু ঠিকমত ঘুমোতেও দিবি না না'কি?
-বাইরে একটা বিড়াল ডাকছে।

সাথে সাথে আমার মেজাজ তিরিক্ষি হয়ে গেল। এই মাঝরাতে কেউ যদি ঘুম থেকে ডেকে বলে, একটা বিড়াল ডাকছে। তাহলে মেজাজ খারাপ হওয়া অস্বাভাবিক কিছু না। বিরক্ত গলায় বললাম, “বিড়াল ডাকছে তো কী হয়েছে?”
-না মানে লাঠিয়ালটার কাছে শুনেছিলাম দারোগার পোলার মানে দারোগার ছেলেটার না'কি একটা পোষা বিড়াল ছিল।
:তো কী হয়েছে? তোর কী মনে হয় সেই বিড়ালের প্রেতাত্মা ডাকছে? মানুষ মরে ভুত হয়। বিড়াল মরে কী হয়? কুত?
-ফাজলামি করিস না। একটু বাইরে গিয়ে দেখে আসবি?

স্বর্ণাপুর দিকে এমন ভাবে তাকালাম যেন ওকে আমি এই মুহূর্তে দারোগার পোলার মত কাচা চিবিয়ে খেয়ে ফেলব। কিন্তু, ঠিকই বের হলাম। বিড়ালের ডাক এখনও শোনা যাচ্ছে। এত রাতে বিড়ালের তো ঘুমিয়েই থাকার কথা।

পুরনো আমলের দরজা। খুলতে বেশ বেগ পেতে হল। দরজা খুলেই যা দেখলাম, তাতে একটা ধাক্কার মত পেলাম। দরজার কাছে একটা জবাই করা বিড়াল পড়ে আছে। মেজাজটা চরম বিরক্ত হল। নিশ্চয় গ্রামের কোন ফাজিল ছেলে মজা করছে। এতক্ষণ বিড়ালের ডাক সেই ডেকেছে। ভয় পেলে ওরা আরও মজা পেয়ে যাবে। তার বদলে এমন ভান ধরব, যেন ওকে কিংবা ওদের আমি দেখে ফেলেছি। বললাম “কে ওখানে? কার ছায়া দেখা যায়?”

সাথে সাথে চূড়ান্ত অদ্ভুত একটা ঘটনা ঘটল। বিড়ালটা ছুটে দৌড় দিল। আমার মাথাটা রীতিমত চক্কর দিয়ে উঠল। কিন্তু, নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারালাম না। যে মুহূর্তে আমার যুক্তি কাজ করবে না, তখনই হ্যালুসিনেশন শুরু হবে। নিশ্চয়ই বিড়ালটা মৃত ছিল না। ওটার গলায় লাল রং করা ছিল। আমার স্নায়ু উত্তেজিত ছিল বলে, আমি খেয়াল করি নি।

কিন্তু, সাথে সাথে ফিসফিস করে কারও গলা শুনলাম, “আমাকে ডেকেছ?”
চারদিকে তাকালাম কেউ নেই। তাহলে কথা বলল কে? এখানে কি গোপন কুঠুরি টাইপ কিছু আছে? থাকতে পারে। ফাজিল ছেলেগুলো নিশ্চয়ই এখানকার অলিগলি চেনে। তাই লুকিয়ে থেকে ভয় দেখানোর চেষ্টা করছে। বললাম, “কে?”
আবার ফিসফিস করে বলল, “আমি ছায়া।”

ভেতর থেকে স্বর্ণাপু বলল, “কী রে! কিছু পেলি?”
বললাম, “আরে নাহ। মনে হয় গ্রামে কোন ফাজিল ছেলে বিড়ালের ডাক ডেকে ভয় দেখানোর চেষ্টা করছে। তুই শুয়ে পড়।”
-তুই শুবি না?
:আমার ঘুম মরে গেছে। এখন আর আসবে না। বাইরে কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করি।
-আচ্ছা। বেশিক্ষণ বাইরে থাকিস না।

সামনে বারান্দার দিকে পা বাড়াতেই আবার ফিসফিস করে শুনতে পেলাম, “ডেকেছ কেন আমাকে?”
মেজাজ খারাপের শেষ স্তরে পৌঁছে গেলাম। বাজখাঁই গলায় বললাম, “ফাজিল ছেলে! যেই হও, সামনে এসো।”

এরপর যা দেখলাম, আমার নিজেরই বিশ্বাস করতে কষ্ট হল। আমার সামনে অন্ধকারের মাঝ থেকে হঠাৎ করে খানিকটা আলো জ্বলতে শুরু করল। অনেকটা তেজস্ক্রিয় পদার্থের বিকিরণের মত। সেটা ধীরে ধীরে একটা মেয়ের অবয়ব নিলো। আমি দেখতে পেলাম একটা মেয়ে। আঠারো কি উনিশ হবে বয়স। শাড়িতে দারুণ মানিয়েছে। কিন্তু, চুলগুলো এলোমেলো। আর চোখে একটা ভয়। ডান হাতটা শাড়ির ভেতরে ঢোকানো। আবার বলল, “ডেকেছ কেন আমাকে?”

বুঝলাম আমার হ্যালুসিনেশন হচ্ছে। এখন তার কথার উত্তর দেয়ার মানে, তার অস্তিত্বকে স্বীকার করে নেয়া। যদি সেটা করি, তাহলে নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেতে অনেক কষ্ট হবে। জানি। কিন্তু, জেনেও তার কথার উত্তর দিলাম। সম্ভবত, তার কণ্ঠে এমন কিছু ছিল, যা শুনে উত্তর না দিয়ে থাকা যায় না। বললাম, “আমি তোমাকে কখন ডাকলাম?”
কিছুক্ষণ কোন উত্তর দিল না। নিশ্চুপ হয়ে মাটির দিকে তাকিয়ে রইল। তারপর বলল, “ছায়া বলে ডাকলে না আমায়?”
মনে পড়ল, একটু আগেই বলেছিলাম, “কে ওখানে? কার ছায়া দেখা যায়?”
খানিকটা বিভ্রান্ত হলাম। হ্যালুসিনেশনে কি এতটা জটিলতা থাকতে পারে? আর ছায়া কারও নাম হিসেবেও আমি মাথায় রাখি নি। তাহলে, আমার ব্রেইন এমন কোন হ্যালুসিনেশন কীভাবে তৈরি করল? কোন জট ছাড়াতে পারলাম না। তাকেই বললাম, “কে তুমি?”
-আমি ছায়া। তমালের স্ত্রী।
:তমাল কে?
-এ বাড়ির মালিক।
চমকে উঠলাম। আমি তমালের নাম জানতাম না। না জানলে আমার হ্যালুসিনেসনেও তার নাম আসবে না। তবুও এলো কীভাবে? বললাম, “যাকে সবাই দারোগার পোলা ডাকে সে?”
ছায়া ঘাড় কাত করল। বলল, “তমাল তোমাদের সবাইকে মেরে ফেলবে। এখনই পালিয়ে যাও।”
-ছোট কাকা লাঠিয়াল দিয়ে গেছে। ঝামেলা হলে সেই দেখবে।

সাথে সাথে মনে পড়ল, বের হবার পর থেকে লাঠিয়ালকে দেখি নি। কোথায় গেল সে?আমার কথা শুনে ছায়া ডান দিকে তাকাল। তার দেখা দেখি আমিও। যা দেখলাম তারপরও আমি কীভাবে স্থির হয়ে দাড়িয়ে থাকলাম জানি না। বাড়িটার শেষ প্রান্তে লাঠিয়ালের জবাই করা লাশ পড়ে আছে। তার চেয়ে ভয়াবহ ব্যাপার। তার মাথা ছাড়া প্রায় শরীরের পুরোটা অংশ কেউ খেয়ে ফেলেছে। শুধু মাথা আর ঘাড়ের কাছে খানিকটা অংশ বাকি আছে। এক পাশে হাড়গোড় জমা করা। এখানে কি হিংস্র কোন প্রাণী আছে? আশেপাশে তো কোথাও কোন বন নেই। তাহলে তাকে মারল কে? গ্রামের কোন ফাজিল ছেলের পক্ষে নিশ্চয়ই এতখানি করা সম্ভব নয়।

ঘোরের মধ্যে ছায়ার দিকে তাকালাম। ছায়া বলল, “লাঠিয়ালকে খাওয়া প্রায় শেষ। এরপর তোমাকে নইলে তোমার বোনকে খাবে।”
ঢাকায় বসে কেউ আমাকে এই কথা বললে, আমি হো হো করে হাসতে শুরু করতাম। এখন কেন যেন পারলাম না।

“তমালকে আটকানোর কোন পথ নেই?” বলেই আমি প্রচণ্ড অবাক হয়ে গেলাম। তার মানে আমি মেনে নিচ্ছি, তমালের প্রেতাত্মা আছে। আমার সামনে দাড়িয়ে তমালের সপ্তম স্ত্রী ছায়ার প্রেতাত্মা। আমি এসব মেনে নিচ্ছি?

ছায়া বলল, “আছে।” শাড়ির ভেতর থেকে ডান হাত বের করল। একটা ছুরি ধরে আছে। বলল, “তোমাকে বা তোমার বোনকে আক্রমণ করলে এই ছুরি এলোপাথাড়ি চালাবে। কাউকে দেখার দরকার নেই। শুধু ছুরি চালাবে।”

ছুরিটা হাতে নিলাম। প্রায় সাথে সাথে মনে হল আমার গলার কাছ সূক্ষ্ম কিছু চলে গেল। হাত দিয়ে দেখলাম রক্ত। প্রচণ্ড অবাক হলাম। এর তো কোন ব্যাখ্যা দাড় করানো যায় না।

ছায়া বলল, “তমাল তোমাকে আক্রমণ করতে এসেছিল। তোমার হাতে ছুরি দেখে তোমার বোনের কাছে গেছে। তাকে বাঁচাও। আমি গেলাম।”
ছায়া মিলিয়ে গেল। সাথে সাথে বাড়ির ভেতর থেকে স্বর্ণাপুর চিৎকার শোনা গেল, “ছোট...”

পাগলের মত ভেতরে দৌড়ে গেলাম। ভেতরে ঢুকে আমার আত্মা জমে গেল। স্বর্ণাপু পাগলের মত হাত পা ছুড়ছে। আর তার গলা দিয়ে গলগল করে রক্ত বের হচ্ছে। সাথে সাথে হাতের ছুরিটা নিয়ে স্বর্ণাপুর খানিকটা ওপর দিয়ে চালিয়ে দিলাম। তবুও, স্বর্ণাপুর হাতের কব্জিতে লেগে কেটে গেল। কিন্তু, আমি স্পষ্ট শুনতে পেলাম অদৃশ্য কিছু জান্তব শব্দ করে স্বর্ণাপুর ওপর থেকে সরে গেল।

প্রায় সাথে সাথে সে আমার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। কাউকে দেখতে পেলাম না। কিন্তু, স্পষ্ট বুঝতে পারলাম কিছু আমার গলা চেপে ধরেছে। নিস্তেজ হয়ে আসছি আমি। কিছু না বুঝেই হাতের ছুরিটা অনুমান মত তার পেট বরাবর চালিয়ে দিলাম। কিছুই দেখতে পেলাম না। কিন্তু, বুঝলাম আমার ছুরিটা কিছুতে গেঁথেছে। গলার হাতও শিথিল হল। ছুরিটা টেনে বের করে আবারও ঢুকিয়ে দিলাম। সাথে একটা মোচড় দিলাম। জান্তব একটা শব্দ শুনতে পেলাম। আর্তনাদের।

বাইরে নতুন সূর্যের আলোটা ঘুলঘুলি পেরিয়ে ভেতরে এসে পড়ল। রাত শেষ হয়ে এসেছে। এর চেয়ে ভয়াবহ কোন রাত বোধ হয় আমার জীবনে আসবে না।

Comments

Popular posts from this blog

বাংলা কবিতায় ছন্দ ; কিছু প্রাথমিক আলোচনা

স্বাতন্ত্রিক