একুশ আমার গৌরব নয়

একুশ আমার গৌরব নয়
আমি দেখেছি,
এক চিরচেনা ফাল্গুনে
অচেনা পলাশের ধারা নিস্তব্ধ রাজপথে।
এক চিরচেনা ফাল্গুনে অচেনা বিদ্রোহী কন্ঠস্বর,
হাজার প্রাণের মাঝে।
ফাল্গুনে চিরচেনা কোকিলের কর্কশ কন্ঠস্বর,
অত্যাচারীর খড়গ।
এক অচেনা দুপুরে,
চিরচেনা মুখগুলোর করুণ আত্মাহুতি।
তবু, ত্যাগীদের ভুলে গিয়ে অবিরাম গেয়ে
অবিরাম গেয়ে চলা একুশের গৌরবগাথা।


একুশ আমার গৌরব নয়!
সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, শফিউর;
সেই মহনীয় মুখগুলো আমার গৌরব।
সেই আবীরাচ্ছন্ন দেহগুলোই আমাকে দিয়েছিল,
আমার ঠোটের ধ্বনিগুলো।
একুশ তো কেবল বর্ষপঞ্জিতে
লোহিত একটি দিনমাত্র
যা মহিমান্বিত হয়েছে তাদের জন্য
তাদের মহনীয় রুধিরের জন্য
তাদের শ্রেষ্ঠদেশপ্রেমের জন্য
তাদের দুর্মর ত্যাগের স্পৃর্হার জন্য।

একুশ তো কেবল প্রতি-বছর ফিরে আসা,
এক স্বত্ত্বহীন উপলক্ষ্য মাত্র।
যেদিন মনে করা হয় কিছু স্বপ্নচারীদের।
বাকি তিনশ পয়ষট্টি দিন তারা থাকে
অন্তহীন কোন এক তেপান্তরের নির্জনতায়।

একুশ আমার গৌরব নয়!
তবু, বারবার আমার চোঁখের সামনে,
ফিরে ফিরে আসে একুশের বন্দনা।
স্বত্ত্বহীন, মূল্যহীন এক দিন কেবল একুশ;
তবু, সেই যেন বাংলা ভাষার ত্রাতা।

আজ আর আমি খুঁজে পাইনা,
বায়ান্নর কোন ভাষাপ্রেমীকে,
কালের অতল গহবরে,
তাদের হত্যা করা হয়েছে সবার হৃদয় থেকে।
আর সেখানে তৈরি করা হয়েছে,
একুশের বিজয়-স্তম্ভ।

এক অন্ধকারাচ্ছন্ন পথের মাঝে,
হাটছে সবাই।
কি করেছে একুশ?
কি’ই বা করতে পারে সে?
সে কখনই আমার গৌরব হতে পারে না।

আমি অনেক দেখেছি,
একুশের বন্দনা, একুশের মহাত্মগাথা।
আজ আমি খুঁজে পেতে চাই,
এমন একটি হৃদয়কে,
যে ভালবাসে,
‘একুশকে নয়,
বায়ান্ন’র প্রতিটি যোদ্ধাকে;
যাদের জন্য আজ আমি বাংলায় কথা বলি’।
‘একুশ যার গৌরব নয়’।

Comments

Popular posts from this blog

নিকষ

বাংলা কবিতায় ছন্দ ; কিছু প্রাথমিক আলোচনা

স্বাতন্ত্রিক