আমি ঘুমিয়ে গেছি, মা!

আমার ওপর তোমার অনেক রাগ?
আমি তোমার দস্যি ছেলে!
বড় আদরের পাগল ছেলে!
বড় অবাধ্য।
তুমি কত বারণ করলে আমায়;
আমি ফিরলাম না।
আমি প্রথমবার তোমার অবাধ্য হলাম।
অনেক রাগ করেছিলে আমার ওপর?
আমি জানি,
বিশ্বাস কর,
আমি তোমায় কষ্ট দিতে চাইনি।
তোমার সব কষ্ট আমি বুঝি, মা।
তবু, আমার শব্দগুলো যে আমার কাছে,
কম দামী ছিলনা।
আমায় যখন প্রতিবাদী অস্তিত্ত্বগুলো ডাকল,
আমি স্তব্ধ হয়ে থাকতে পারিনি।
আমার বিবেক আমাকে তাড়িয়ে নিয়েছে।
মা, রাগ কোরোনা;
তোমার এ অবুঝ ছেলে যে
কেবল তোমার কষ্ট বাড়াতেই জন্মেছে।
তুমি কি ভাবো?
আমি কষ্ট পেয়েছি? ব্যাথা পেয়েছি?
একটুও না।
শুধু তাকিয়ে দেখেছি।
শেষ দুপুরের রোদে
নলগুলো চিকচিক করছিল।
বড্ড অবুঝ ছিলাম আমি,
অনুভব করতে পারিনি।
অহংকারে মোড়ানো নল থেকে
শুধু একদলা পৈশাচিকতায় আবৃত
বারুদ বেরিয়ে আসতে দেখেছি।
নীল শার্টে রক্তগুলো বেগুনী লাগছিল।
বুঝতেই পারলাম না।
শুধু চোঁখদু’টো ঝাপসা হয়ে এল;
খুব কষ্ট হচ্ছিল দু’পায়ে দাড়াতে;
ইচ্ছে হচ্ছিল,
তোমার কোলে শুয়ে আর একবার ঘুমাই।
গভীর ঘুম!
আর তুমি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দাও;
ছোট বেলার সেই দুরন্ত আমাকে;
রূপকথার গল্প শোনাও;
বাংলায়!
আমার নিজের ভাষায়।

লাল পোস্টারটায় রক্ত গুলো
কোন রেখাপাত করেনি।
তা আগের মতই প্রজ্জ্বল ছিল
‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’
প্রতিটা অক্ষর যেন ছিল
আমার শ্রেষ্ঠ ঐশ্বর্য্য।
কোন অবোধ হিংস্রতার কাছে
আমি তাকে বিসর্জন দেব?

মা, আমিতো শুধু
আমার অধিকারটুকু চেয়েছিলাম।
আমি তো মরতে চাইনি।
আমি তো তোমার আচলের তলায়
বাধ্য ছেলের মত থাকতে চেয়েছিলাম।
তোমার কাছে কি আমার থাকতে ইচ্ছে হয়না?
সারাটি বিকেল আড্ডা দিয়ে
আবার তোমার কোলে ফিরে আসব।
সারারাত জেগে পড়ব;
হারিকেনের নিভূ নিভূ আলোয়।
তুমি আমায় বকবে!
‘এত পড়িস কেন?
এবার ঘুমোতে আয়।’
আমি তোর চুলে বিলি কেটে দিই;
দেখবি কখন ঘুমিয়ে গেছিস!

আমি ঘুমিয়ে গেছি, মা!
ওরা আমায় আর জাগতে দিলনা।
আমার দুঃখ নেই।
আমি ওদের পরাজিত করেছি।
ওরা আমার একটা শব্দকেও কেড়ে নিতে পারেনি।

কষ্ট হচ্ছে তোমার?
আমায় দেখতে পাচ্ছনা তাই?
আমি তো তোমার চারপাশে;
তোমার মাঝে।
তোমার মুখের প্রতিটি শব্দে মিশে আছি আমি।
তোমার প্রতিটি ধ্বনিতে,
তুমি আমায় খুঁজে পাবে।

তোমার অবাধ্য, দস্যি ছেলে আজ অমর হয়েছে।

Comments

Popular posts from this blog

নিকষ

বাংলা কবিতায় ছন্দ ; কিছু প্রাথমিক আলোচনা

স্বাতন্ত্রিক