হে মহাকবি...
আমি ছিলাম তোমাতে মুগ্ধ একজন।
তোমার কবিতার প্রতিটি শব্দ আমায় আচ্ছন্ন করে রাখত প্রতিটি মুহূর্ত
তুমি;
তোমার কবিতা;
আমার কাছে ছিল মহাদেবের মতই পূজনীয় কিছু।
কিংবা, অর্ফিয়াস!
তার অশ্রুতপূর্ব বাঁশির তরঙ্গে, আমি মোহিত হতাম। আমি মুগ্ধ হতাম।
আমি নীরবে নিভৃতে,
তোমার প্রতি আমার নৈবদ্য সাজাতাম।
আমার প্রতিটি শব্দ ছিল, তোমার প্রতি আমার অর্ঘ্য।
আমি ছিলাম তোমাতে বিস্মৃত একজন।
আমার অচেনা কিছু শব্দের লীলাখেলা দেখে,
আমি তোমার প্রতি শ্রদ্ধায় আমার শির অবনত করতাম। আমি বিস্মৃত হতাম-
আমার বোধ-বুদ্ধি-চেতনা!
সব মিলেমিশে শূন্যে মিলিয়ে যেত তোমার; তোমার কবিতার সামনে এসে।
আমার বিচার শক্তি রহিত হত।
ক্রমশ, তা হয়ে উঠছিল, আমার অবোধ্য।
আমি ভাবতাম, আমার দুর্বলতা।
এরপর!
কেটে গেল অনেকটা সময়।
সময়ের স্রোতে,
হঠাৎ, কোন দেব-প্রদত্ত বরের মত, আমি ফিরে পেলাম আমার চেতনা।
আমি আর এক পলক দেখলাম তোমার কবিতাগুলোকে।
নিজের অজান্তে এক আর্তনাদ বেরিয়ে এলো আমা হতে।
এতদিন আমি কিসে আমার অর্ঘ্য নিবেদন করেছি!
মর্তবাসী আমি অলিম্পাসের জিউসকে বুঝতাম না।
তাই নির্বোধের মত তাকে পূজো করে গেছি।
কিংবা, ইন্দ্র ক্রমাগত তপস্যারত আমার সামনে অদৃষ্টপূর্ব অপ্সরা গোচর করিয়েছে।
আমি মুগ্ধ বিস্ময়ে দেখে গেছি।
আমি বুঝি নি কিছুই। তাই, তুমি ছিলে আমার কাছে মহনীয় কিছু।
যখন আমি খুঁজে ফিরেছি নিকষ সরলতা-
তুমি তার মাঝে এনে দিয়েছ একগুচ্ছ জটিল জঞ্জাল।
আমি তার কিছুই চিনি নি।
তাই তাতে বারেবার মুগ্ধ হয়েছি।
হে মহাকবি,
আমি অচ্ছুৎ একজন।
তোমাদের বুর্জোয়া নগরে অনাকাঙ্ক্ষিত।
আমি কবিতার মাঝে খুঁজে ফিরি সহজ জীবনবোধ।
তোমরা আমায় উপহাস কর!
দুঃখিত!
আমি তোমার মত সুউচ্চ কেউ নই।
আমি সাধারণ; অতি-সাধারণ।
আমি প্রতিনিয়ত প্রতিটি শব্দের মাঝে সরলতা খুঁজে ফিরি।
সাধারণ শব্দের অসাধারণত্বেই আমার সার্থকতা।
তোমার গুরুগম্ভির বজ্রনিনাদ তোমার কাছেই তোলা থাক;
আর থাক তোমার মত যত উত্তরাধুনিক মহামানবদের কাছে।
আমি সাধারণের গল্প বলব;
আমি সাধারণের কবিতা লিখব;
আমি যত সাধারণ অনুভূতিমাখা জলবিন্দু নিয়ে
গড়ে তুলব এক অসাধারণ মহাসাগর।
তুমি পসিডন হয়ে ক্ষুব্ধ বিস্ময়ে দেখবে কবিতার সাধারণত্ব।
তুমি কবিতাকে সংকুচিত করে নাও যতটুকু পার_
তোমার মত মহাকবিদের কাছে।
আমি;
কবিতাকে ছড়িয়ে দেব জন হতে জনান্তরে।
তোমার দুর্বোধ্য জটিলতা তোমার কাছে তোলা থাক।
আমার কাছে আমার সরলতা...
Comments
Post a Comment