সংঘাত নয় শান্তি
সম্ভবত আমি মারা গেছি।
ঠিক একটু আগে।
তবে আমি নিশ্চিত নই।
তবে আমি নিশ্চিত আমি মারা গেছি একটু আগে।
তবে, যতদুর জানি,
আমি মারা গেছি বহু আগেই।
আমি মারা গেছি ঠিক তখন;
যখন আমি দেখেছিলাম,
ওই জ্বলন্ত বাসের মধ্যে আমার ভাইকে পুড়তে।
আমার ভাই মারা গিয়েছিল।
এবং আমি মারা গিয়েছিলাম।
আমি মারা গিয়েছিলাম ঠিক সেদিন;
যখন আমার বোনকে ছিবড়ে খেয়েছিল,
ক্ষমতাসীন পিশাচেরা।
না! আমার বোন সেদিন মরে নি।
মরে গিয়েছিল তার আত্মা!
এবং আমি মারা গিয়েছিলাম।
আমি মারা গিয়েছিলাম ঠিক সেই সময়;
যখন অসহায় সিএনজিওয়ালার শেষ সম্বলটুকুও ওরা জ্বালিয়ে দেয়।
পুড়িয়ে দেয় একটা পরিবারের দু’বেলার অন্ন সংস্থান।
ধ্বংস করে দেয় কোন বৃদ্ধের অষুধের খরচ;
কিংবা শিশুর ফিডারের দুধ।
ওরা কেউই মারা যায় নি।
শুধু পরাজিত হয়েছিল জীবনের যুদ্ধে।
ওদের ভাগ্যে ঠিক কী ঘটেছিল আমি জানি না।
শুধু জানি;
আমি মারা গিয়েছিলাম।
কিংবা ঘটনাটা সেদিনও ঘটতে পারে;
যেদিন আমার বাবা নটা-পাঁচটা অফিস করে ফিরছিল নীড়ে।
বলতে পারো?
তুমি কখনও আমাকে বলতে পারবে?
ঠিক কী অপরাধে তাকে জ্বলন্ত বাসের মধ্যে জীবন্ত দাহ হতে হল?
কোন উত্তর আছে তোমার?
দেশের জন্য? দশের জন্য? বৃহত্তর স্বার্থে ক্ষুদ্র ত্যাগ?
বন্ধ কর। এই মুহূর্তে বন্ধ কর, তোমার ওসব বড় বড় বুলি আওড়ানো।
একজন চাকুরীজীবীর মৃত্যু তোমাদের কাছে ছোট হতে পারে!
কিন্তু, আমি...
এই আমি এই দেশের একজন নাগরিক বলছি
সে আমার কাছে ছোট কেউ না।
গতকাল আমি যাকে মরতে দেখেছি,
সে আমার ভাই, সে আমার বোন, সে আমার বাবা।
এবং সে আমি।
প্রতি নিয়ত মরছি।
তোমরা আমার সোনার বাংলাকে ধ্বংসস্তূপ করেছ;
দাড়িয়ে দেখেছি।
তোমরা ক্ষমতার লোভে পিশাচ হয়ে গেছ;
দাড়িয়ে দেখেছি।
তোমরা মানুষকে শেয়াল কুকুর ভাবতে শুরু করেছ;
দাড়িয়ে দেখেছি।
বলতে পার, আর কতখানি দেখলে তোমাদের রক্তসাধ মিটবে?
রক্ত কেবল রক্ত ছাড়া আর কিছু আনতে পারে না।
আর কিচ্ছু না। আর কিচ্ছু না।
আমি মানুষ, আমি বাঙালি, আমি এ দেশের একজন আমজনতা বলছি
এই সংঘাত বন্ধ কর।
আমি বাঁচতে চাই। আমি বেঁচে থাকা দেখতে চাই।
আমি আমার ভাইকে ফিরে চাইনি।
চাইনি বোনকে কিংবা বাবাকে।
শুধু চেয়েছি, সংঘাত বন্ধ করে
একটি শান্তির গোলাপ ফুল!
দেবে কি?
Comments
Post a Comment