(১) -এখন কোথায় তুই? :ফেরিতে। পদ্মায়। -কী করছিস? :স্বর্ণাপুর বকর বকর শুনছি। প্যানপ্যান করে কান ঝালাপালা করে দিল আমার। -হা হা হা। শুনতে থাক। :হাসবি না একদম বলে দিলাম। আমার জ্বালা আমি বুঝতেছি। -পিচ্চি, তোকে একটা কথা বলি? রাখবি? :হঠাৎ সিরিয়াস হয়ে গেলি! কী হয়েছে? বল। আমার বুড়িপুর কথা আমি রাখব না, এ হতে পারে? -রাতে অন্তত ওখানে... :আবার শুরু করলি! তোকে বলেছি না, এসবে আমার এক ফোঁটা বিশ্বাস নেই। তাই আমাকে এসব বলেও লাভ নেই। রাখলাম। বাই। -খোদা হাফেজ। (২) আমি যে বাড়িতে আছি, সেটা আমাদের গ্রামে তো বটেই আশেপাশের দশ গ্রামে মোটামুটি প্রখ্যাত বাড়ি। ভাল কোন কারণে খ্যাতি না। পোড়া বাড়ি হিসেবে খ্যাতি। সহজ ভাষায় বললে ভুত প্রেত সমৃদ্ধ বাড়ি। একটা ভূতের সাথে এক রাত গল্প করার শখ আমার অনেক দিনের সেই সুবাদেই এখানে আসা।
আমরা অনেকেই হয়তো করেছি কবিতা আবৃতি। স্কুলের বাৎসরিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে হাত পা নেড়ে নেড়ে আবৃতি করেছি - ভোর হল দোর খোল খুকুমণি ওঠো রে ওই ডাকে জুঁই শাঁখে ফুলখুকি ছোট রে। কিন্তু, কখনও কি খেয়াল করেছি, "ভোর হল" কিংবা "জুঁইশাঁখে" বলার পর নিজের অজান্তেই কিছুক্ষণের জন্য থেমে যাচ্ছি? কেউ কেউ হয়তো করেছি। কিন্তু, বেশিরভাগ এরই অবচেতন মনে ঘটেছে ঘটনাটি। এই থেমে যাওয়া থেকেই ছন্দের শুরু।
মেয়েটি জন্মাতে চাইল। আমি তার হৃদপিণ্ডের ভেতর হাত ঢুকিয়ে, তার হৃদয়টাকে টেনে বের করে আনলাম। সে উদ্ভাসিত হয়ে উঠল। সে আলোকপ্রাপ্ত হল। সে জন্মালো। মেয়েটি আশ্রয় চাইল। আমি সূর্যটাকে ঠেলে সরিয়ে অধিষ্ঠিত হলাম আর সমগ্র আকাশ পটে আমি জড়িয়ে রাখলাম নিজস্বতাকে। সে আশ্রয় নিল বুভূক্ষের মত। সে আঁখি লুকালো। সে আঁখিজল লুকালো। মেয়েটি বিস্তৃতি চাইল। আমি একটা, দু'টো, তিনটে করে তার একষট্টি হাজার বোধ ছড়িয়ে দিলাম আকাশের গায়ে মেঘের মত করে। সে বিস্তৃত হল নগরায়নের মত। সে বিস্তৃত হল পারমাণবিক বিস্ফোরণের মত। মেয়েটি স্বাতন্ত্র চাইল। আমি শ্রাবণকে তার মাঝে গেঁথে দিয়ে আমিত্বকে লুকোলাম ধূসরের আড়ালে আর তাকে ঝরতে দিলাম স্বাতন্ত্রিকতায়। কেউ মুগ্ধ হল। অজস্র মুগ্ধ হল। অজস্র শ্রাবণস্নানে রত। আমি একাকীত্ব চাইলাম।
Comments
Post a Comment