ডাস্টবিনের কবিতা

তেরটি কবিতা আজ ছুড়েছি ডাস্টবিনেতে।
একটি কবিতা আজ অফিস-ক্লান্ত হয়ে
একটা লাল গোলাপ কিনে ফিরে আসছিল মাধবীলতার তরে।
যে মাধবীলতা আজ এক পেয়ালা চা নিয়ে দাড়িয়ে ছিল ও আছে।
কবিতাটা আর নেই।
আর দুইটি কবিতা শেষ বিকেলের রোদে
স্নান শেষে ফিরছিল যে যে যার যার ঘরে।
একটুকু ভালবাসা দুইহাতে চেপে ধরে
বালক আর বালিকা প্রতিজ্ঞা করেছিল, এই হাত ছাড়বে না।
এখনও দুজনকে ধরে আছে দুইজনে।
শুধু নেই কবিতারা।

একটি কবিতা হাতে ধরে রেখেছিল তার সারাদিন-সঞ্চয়।
বোনটার হাসিমাখা একখানি লাল ফ্রক।
তেরটি দিনের পরে সে কিনতে পেরেছিল আধেক কেজি মাংস।
মাংসটুকু কাবাব হয়ে গেছে জব্বর।
কবিতাটা ঝলসানো।
আর একটা কবিতা বিশ্ববিদ্যালয়ে কাঁপুনি ধরিয়েছিল।
যেন বজ্রকণ্ঠের দুর্বার হুঙ্কারে ছিন্নভিন্ন হবে যত শোষকের দল।
আজন্ম বিপ্লবী কবিতাটা আজ নেই।
এইসব কবিতারা নীড়ে ফিরে আসছিল।
শেষ বিকেলের রোদে একটু স্নিগ্ধতায় বাসটা এগোচ্ছিল।
সহসাই সচকিত রোদ্দুর হয়ে গেল লালাভ অগ্নিশিখা।
তেরটি কবিতা আজ মরে গিয়ে বেঁচে গেল।
অসুস্থ রাজনীতি আর ক্ষমতার যত কলুষতা থেকে দূরে
মরে গিয়ে বেঁচে গেল।
পেট্রোল বোমাটায় এতখানি সুখ রবে — কেই জেনেছিল কবে?
কবিতাদের কাবাব মুখরোচকই হবে।
জানা নেই ঠিকমতো।
চেখে দেখার আগেই তেরটি কবিতা আমি পুঁতেছি ডাস্টবিনেতে।
ওদের কবর দিয়ে উপহাস করবার মত ধৃষ্টতা আমি — করব না কখনও।
ওরা ডাস্টবিনে থাক।
এদেশে রাজনীতির চেয়ে বহু বহুগুণে ডাস্টবিন পবিত্র।

Comments

Popular posts from this blog

নিকষ

বাংলা কবিতায় ছন্দ ; কিছু প্রাথমিক আলোচনা

স্বাতন্ত্রিক