দ্রোহ


যখন তুমি তোমার বিলাসী গাড়িতে যাও সুরম্য প্রাসাদে
কখনও কি পাশে তাকিয়ে দেখেছ?
নিশ্চই নয়!
আয়েসী চোঁখের দৃষ্টি পৌছায় না ওই ডাস্টবিনে
তুমি দেখতে পাওনা সেখান থেকে ক্ষুধার্ত কুকুরের হিংস্র দৃষ্টি
জ্বলজ্বলে দু’টি চোঁখ ক্রমাগত খুঁজে ফেরে এক টুকরো খাবার
দুর থেকে দেখে মনে হয় নিকৃষ্টতম বুনো পশু।
কখনও সেদিকে ভুল করেও এগিয়ে যাওনা তুমি-
তবে হয়ত তুমি দেখতে পেতে ওরা মানবশিশু।
তুমি নিজহাতে তাকে করে তুলেছ নিকৃষ্টতম পশু।
তোমার কাছে ওরা বর্বর, হিংস্র, নৃশংস-
ওরা মানুষ খুন করতে দ্বিধা করেনা দু’দশটি টাকার জন্য
একমুঠো খাবারের জন্য ওরা সবকিছু করতে প্রস্তুত
তুমি ওদের এড়িয়ে চল।
পথের ঘৃণ্য কুকুরগুলো থেকেও যেন ঘৃণ্য ওরা
তার চোঁখের তারায় মৃতপ্রায় স্বপ্ন
তাতে প্রলয়ের আগুন নিশ্চই দেখনি।


আমি অনুভব করেছি
তার মাঝে থাকা দ্রোহের অনলে
সেই তুচ্ছ প্রাণের মাঝে লুকিয়ে থাকা সূর্যসেন-
সে তোমারই সৃষ্টি।
তবু, তুমি ভুলেও তাকে কখনও দেখতে পাবেনা-
পথের কুকুরগুলোর মাঝে নজরুলেক কবিতা লিখতে
অনেক পরাজয়ের পরেও নবতর বিপ্লবের বীজ বুনতে
আমি দেখেছি! বারবার-
প্রতিটি রাস্তার মোড়ে, পথের গলিতে বা রেললাইনের ধারে
পড়ে থাকা মৃতপ্রায় দেহগুলোই বিপ্লব সৃষ্টি করে
অত্যুজ্জ্বল দ্রোহালোক বয়ে নিয়ে চলে জন হতে জনান্তরে
আর তুমি অথবা তোমরা তাকে নিজহাতে হত্যা কর,
হিংস্র পশুর মত।
উপমাটাকে কি ভুল বলবে?
বলতে পার-
জঙ্গলের হিংস্রতম পশুও তো অকারণে কাউকে হত্যা করেনা।
তোমরা কর-
কারণে, অতি তুচ্ছতর কারণে বা অকারণে
কিংবা নিজেদের রক্ষা করতে তোমরা হত্যা কর নবচেতনাকে-
আর তাদের যারা তা ধারন করে।

ক’জন লেনিনকে হত্যা করবে তোমরা?
নিশ্চিহ্ন করবে ক’জন ম্যান্ডেলা বা মাও সে তুং কে?
ওরা আবার জেগে উঠবে।
রেললাইনের ওই বস্তিতে চেয়ে দেখ-
দুপুরের ওই তপ্ত রাজপথে চেয়ে দেখ-
বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই অকর্মন্য তারুণ্যের দিকে চেয়ে দেখ-
চেয়ে দেখ তোমার চারিদিকে,
তোমার কাছে থাকা অস্ত্রের সহস্রগুন
গুয়েভারা সেখানে অপেক্ষা করছে।

এ বিদ্রোহ থামার নয়; একে তুমি থামাতে জান না।
হয়ত কোনদিনা জানার চেষ্টাও করবে না!
নির্বিচারে হত্যা করতে চাইবে তীতুমীরদের
তার মৃতদেহের বজ্রকন্ঠ থামাতে জান তো?

যেদিন থেকে তুমি নিজেকে ভাবতে শুরু করেছ
মানুষ হতেও বড় কিছু-
সেদিন থেকেই তুমি নিজেকে তৈরি করেছ নিকৃষ্টতম পশু
সমাজে তুমি তৈরি করেছ অজস্র শ্রেণীভেদ
একদিকে তুমি এবং তুমি- তোমরা
আর একদিকে ঘৃণিত জীবগুলো- আমরা
প্রত্যেককে তার শ্রেণীতে করেছ শৃঙ্খলিত
আজ দ্রোহের প্রলয় সেই শৃঙ্খলকে বিচূর্ণ করবে।

পথে পড়ে থাকা ওই মুমূর্ষ সুকান্তকে আমি দেখতে পাই
ক্ষুদিরাম তাকে জাগিয়ে তুলছে
যদি পার তো তাকে থামানোর চেষ্টা কর
অশনি সংকেত কি শুনতে পাও
দেখতে পাও কি বিদ্রোহের প্রবল তেজ
তুমি তাকে ভয় পাও
আমি শ্রদ্ধা করি, ভালবাসি
ভালবাসি দেখতে তুমি পুড়ে যাচ্ছ দ্রোহানলে
আর্ত চিৎকার শুনে ক্রুর হাসছে লুথার কিং

হাতে অস্ত্র তুলে নাও
যতটা পার চালাও মারনযজ্ঞ
তারপরে একবার সামনে তাকাও
দেখ প্রীতিলতাদের
তার কোন শেষ কি দেখতে পাও?
এ তোমাদেরই তৈরি করা বিপ্লব
এই তোমাকে ধ্বংস করবে
তোমাদের আর তোমাদের ঐশ্বর্য্য যা তোমাদের অহংকার
তার সবকিছুকে ছিন্নভিন্ন করবে মুজিবেরা
রাস্তার ধারে ঐ হিংস্র দৃষ্টিতে কি তার প্রতিচ্ছবি দেখতে পাও?

Comments

Popular posts from this blog

নিকষ

বাংলা কবিতায় ছন্দ ; কিছু প্রাথমিক আলোচনা

স্বাতন্ত্রিক