একুশে!

হয়তো দিনটা ছিল আর দশটা দিনের মতই;
পার্থক্য, ওরা প্রতিবাদকে করতে চেয়েছিল শৃঙ্খলিত;

পার্থক্য, এই দিনটাতে সাড়ে চার কোটি আত্মা
তার ভাষার প্রতি,
তার মায়ের প্রতিটি ধ্বনির প্রতি,
যেটুকু ভালবাসা রুদ্ধ করে রেখেছিল অন্তহীন কারায়-
তারা হৃদয়ের লৌহকপাট বিচূর্ণ করে প্রস্ফুটিত হয়-
শ্বেত-পদ্মেরন্যায়।
যা প্রতিটি বাঙালিকে ধাবিত করেছিল,
মৃত্যুভয় উপেক্ষা করে চিরন্তন স্বাধীনতার পথের অভিযাত্রিক হতে।
পার্থক্য, এই দিনটাতে জনসমুদ্রের মাঝে;
সৃষ্টি হয়েছিল মহাকাল-রূপ জলোচ্ছাস।
যা ভাসিয়ে নিয়ে যায় সকল শোষণ, বঞ্চনা আর ত্রাসকে।
সৃষ্টি করে নতুন দিগন্তরেখা।
যেখানে ইন্দ্রধনুর সাতরং খেলা করে স্বাধীন মুক্ত আকাশে
তবু, রক্তিম বরণ থাকে সবার উপরে
ঠিক যেন মায়ের মত।
যে নিজের অবাধ্য সন্তানদের লুকিয়ে রাখে আচলের তলায়।
তবু, তাদের দুরে ঠেলে দেয়;
যখন অস্তিত্ত্ব সংকটাপন্ন।
যখন হাঙরের হিংস্র হাসি গ্রাস করতে চায় স্নিগ্ধতাকে
তাই, সেই অবাধ্য সন্তানদের রক্তস্রোত
আচ্ছাদিত করে তপ্ত-রাজপথকে
রাঙিয়ে দেয় উদিয়মান প্রভাকরের ন্যায়।

পার্থক্য, এই দিনটাতে ভালবাসার কাছে পরাজিত হয়েছিল হিংস্রতা-
ওরা ভালবাসার প্রতি ছুড়েছিল ক্ষুদ্র স্ফুলিঙ্গ;
যার প্রতিফলন হয়েছিল দাবানল হয়ে।

পার্থক্য, এই দিনটাতে হাঙরের মত
বারুদের গন্ধ আচ্ছাদিত করেছিল প্রতিবাদী কন্ঠস্বরগুলোকে।
তাদের করে দিতে চেয়ছিল নিঃস্তব্ধ।
ওরা থামিয়ে দিতে চেয়েছিল অগ্রগামী মুখগুলো,
শফিউল, জব্বার, রফিক, বরকত, সালাম-
ওরা মায়ের প্রতি ভালবাসা মেনে নেয়নি।
তাই নিশ্চিহ্ন করে দিতে চেয়েছে সেই অগ্রগামী মুখগুলো
যারা প্রতিবার সামনে থেকে এগিয়ে নিয়ে গেছে,
প্রতিবাদী হৃদয়গুলোকে।

পার্থক্য, এই দিনটাতে জেগে উঠেছিল
সাড়ে চার কোটি হৃদয়।
যা উৎসর্গিত হয়েছিল কেবলই তাদের ভাষার জন্য-
তাদের মায়ের করুণ আকুতির জন্য-
ভাইয়ের প্রতিটি রক্ত-বিন্দুর জন্য-
বোনের ভালবাসার জন্য-
যার প্রতিদান বাঙালি দিয়েছিল-
সেই পড়ন্ত দুপুরে-
একুশে!

Comments

Popular posts from this blog

নিকষ

বাংলা কবিতায় ছন্দ ; কিছু প্রাথমিক আলোচনা

স্বাতন্ত্রিক