ফিরে এসেছি

আমি সেই সময়ের কথা বলছি,
যখন ভাগীরথীর তীর জুড়ে অস্তমিত হয়েছিল প্রভাকর;
সেদিন হয়ত পলাশীর শোণিত ভাগীরথীকে রঞ্জিত করেনি,
হয়ত করেছিল; লোহিত আচলে ঢেকে দিয়েছিল তাকে।
তখন তোমরা নিশ্চুপ ছিলে।

আমি সেই সময়ের কথা বলছি,
সহস্র বিপ্লবী সেনা প্রতিরোধ করেছিল;
শোষিত হয়েও তোমরা চুপ ছিলে; তাই হয়েছিলে পরাজিত।
পদশৃঙ্খলকে করেছিলে আরও দৃঢ়,
যা ভাঙ্গতে এক শতাব্দী লেগেছিল।


আমি সেই সময়ের কথা বলছি,
যখন পৃথক দু’টি সত্ত্বাকে একীভূত করতে চেয়েছিল,
এক অবাস্তব বিম্ব দিয়েছিল তাকে।
যার দেহের দুই অংশ ছিল বারশ মাইল দুরে,
কেবল নিষ্পেষিত হবার আশায় তোমরা নিশ্চুপ ছিলে।

আমি সেই সময়ের কথা বলছি,
যখন উদীয়মান রবি উদিত হবার পূর্বেই অস্তমিত হয়েছিল।
তারা চার কোটি মানুষকে করতে চেয়েছিল নির্বাক, নিঃশব্দ;
কেড়ে নিতে চেয়েছিল মুখের প্রতিটি শব্দ, প্রতিটি অক্ষর, প্রতিটি ধ্বনি;
হয়ত তখন সামান্যই জেগেছিলে, করেছিলে সামান্য ত্যাগ;
সেই সামান্য প্রতিরোধ তাদের দম্ভকে বিচূর্ণ করেছিল।
পিছু হটেছিল তারা,
কিšতু তন্দ্রা তখনও কাটেনি।

আমি সেই সময়ের কথা বলছি,
যখন একটি ঘুমন্ত আসাদের লক্ষ জাগ্রত প্রতিবিম্ব সৃষ্টি হয়েছিল।
একটি মৃত আত্মা ছড়িয়ে পড়েছিল নিযুত দেহে।
এক গণজাগরণ,
তা আগে দেখিনি কেন?

আমি সেই সময়ের কথা বলছি,
যখন ঘুমন্ত বাঙালি জাগ্রত হবার ক্ষমতা হারিয়েছিল।
যখন তাদের পথ ছিল শবাচ্ছন্ন; যার শেষ স্বর্গ বা নরকে।
এতদিনে জাগলে,
বড্ড দেরি করে ফেলেছিলে; তবু জিতেছিলে;
তন্দ্রাহীন জাগ্রত পথে।

সেথা হতে আজ আমি আবার ফিরে এসেছি,
তোমাদের স্বপ্ন ভাঙ্গতে।
অতীত ছাড়া বর্তমান মূল্যহীন আর ভবিষ্যৎ অবাস্তব;
এ তন্দ্রা তোমাদের গ্রাস করেছে,
অতীতের সামান্য ত্যাগ, একটু ভালবাসা, অনেকটা একতা;
তোমাদের রক্ষা করেছিল
সে আজ শুধু বইয়ের ছেড়া, শুষ্ক, নির্জীব পাতা।

মনে কর,
ভাগীরথীকে, ব্যারাকপুরকে, লাহোরকে, আমতলাকে, মধুর ক্যান্টিনকে;
মনে কর, তোমার হৃদয়কে, ঘুমিয়ে পড়া সত্ত্বাকে,
নইলে.......
পদশৃঙ্খল পরতে তৈরি হও,
পুনরায়......

আজ সাড়ে ষোল কোটি জনতার ভিড়ে ফিরে এসেছি,
সাড়ে সাত কোটি আত্মাকে,
তিরিশ লক্ষ অমরাত্মাকে নিয়ে;
নিশ্চুপ, নির্বাক, নিস্তব্ধ হয়ে দেখছে তোমাদের অতীত-বিস্মৃতি,
সভ্যতাকে, ইতিহাসকে, অতীতের শিক্ষাকে ভুলে,
কি করে হলে ভূত-পূজারী?
কার দাসত্ব করছ তোমরা?
তোমাদের অগণিত ভ্রান্তির ভিড়ে
একটি মহৎ প্রাণ খুঁজতে-
একটি বিদ্রোহী হৃদয়কে খুঁজতে-
ফিরে এসেছি।

তেপান্তরে নিজেকে না খুঁজে আপন হৃদয়ে খোজ,
খুঁজে পাবে সূর্য সেন, সালাম, বরকত, আসাদ বা মতিউরকে;
খুঁজে পাবে সবার আগে বাংলাদেশকে, বাংলাদেশের মানুষকে;
যতদিন এ বাক্য মহাসত্য, যদি মহাপ্রলয়ও ঘটে তবুও তুমি স্বাধীন।
মৃত্যুর পরেও জাগ্রত তোমার হৃদয়।
তাকে ঘুমিয়ে পড়তে দিও না,
সে যেন নিশ্চুপ না হয়,
তবে, শৃঙ্খলিত হবে সহস্রাব্দের জন্য,
পুনরায়.......
তাই তোমাদের জাগ্রত করতে আমি ফিরে এসেছি।

Comments

Popular posts from this blog

নিকষ

বাংলা কবিতায় ছন্দ ; কিছু প্রাথমিক আলোচনা

স্বাতন্ত্রিক