আমি ভালবাসতে জানি
আমি তোমায় ভেবেছিলাম মহনীয় কিছু
আমি অতি-সাধারণ
আমি মুগ্ধ-বিস্ময়ে চেয়ে দেখতাম তোমায়
মন্ত্রাহুতের মত শুনতাম তোমার কথা
আমার দু’চোখ ফেটে কান্না আসত
অজস্র সভা-সেমিনারে তোমার বক্তৃতা শুনে
আমি আপ্লুত হতাম
বুঝতে চেষ্টা করতাম তোমার মহত্ত্ব
ভেবেছিলাম পথের ওই করুণ মুখগুলোকেই তুমি আপনজন ভাব
দুঃখিত! তোমায় চিনতে পারিনি!
আমি তোমায় প্রথমবার চিনেছিলাম রাতের অন্ধকার ফুটপাতে
চলার পথে এক পথ-শিশুর ছোঁয়ায়
যখন অপবিত্র হয়েছিল তোমার দেহ;
আমি প্রথমবার তোমায় চিনেছিলাম।
প্রথমবার দেখেছিলাম তোমার বীভৎসতা!
তোমার বুটের লাথিতে জড়িয়ে থাকা রক্তধারা
তোমার কাছে ধূলিকণার চেয়ে বেশি কিছু ছিলনা।
আমি যখন তোমায় ভুল চিনেছিলাম,
আমার চোখ ফেটে কান্না এসেছিল।
যখন সত্যি তোমায় চিনলাম,
আমার চোখ ফেটে কান্না এলো।
আমি প্রথমবার তোমায় চিনেছিলাম এক অভিজাত শপিং-মলে
দু’হাতে অজস্র টাকা খরচ করে ফেরা পথে
যখন তোমার গাড়ির পাশে
এক অসহায় মুখ এসে দাড়ায় দু’দশটি টাকার জন্য...
তুমি তাকে মাঝ রাস্তায় ছুড়ে ফেলতে দ্বিধা কর না।
আমি বুঝতে চেয়েছি ‘তখন তুমি কি অনুভব কর’?
পারিনি।
কারণ, আমি সাধারণ; অতি-সাধারণ।
আর তোমার জন্য আমি একটি উপমাই দিতে পারি; নীচ।
আমি তোমায় প্রথমবার চিনেছিলাম এক শেষ বিকেলের রেস্টুরেন্টে;
যেখানে তোমার হাত থেকে টাকা যেন উপচে পড়ে।
সেই তুমি, ফেরার পথে ডাস্টবিনের পাশে পড়ে থাকা
কোন মৃতপ্রায় সত্তা দেখে নাক সিটকাও।
ঘৃণায় মুখ ফিরিয়ে নাও।
এই তোমার মানবতা!
এই নিষ্ঠুর তোমাকে আমি চিনতে পারি না।
সেই মহৎপ্রাণ তোমাকেও চিনতে পারি না।
পত্রিকার কলামে যেই তুমি
মানবতার নামে বড় বড় বুলি ছড়াও,
রাস্তার ধারে সেই তুমিই
ঘৃণায় ওদের দিকে ফিরেও তাকাও না।
এই যদি তোমার আভিজাত্য হয়,
তবে আমি গর্বিত আমি অভিজাত নই।
আমি সাধারণ; অতি-সাধারণ।
আমি টিভি-ক্যামেরার সামনে ওদের জন্য কেঁদে বুক ভাসাতে জানি না।
আমি শুধু ওদের পরম মমতায় বুকে জড়িয়ে ধরতে জানি।
মানবতা, সহমর্মিতা, ভ্রাতৃত্বের মত বড় বড় শব্দ আমি বুঝি না।
ওগুলো তোমার জন্যেই তোলা থাক।
আমি শুধু অনুভব করতে পারি ভালবাসা;
আমি ওদের সেটুকুই দেব।
আমি ওদের সেটুকুই দিয়ে চলেছি যখন থেকে
তোমায় প্রথমবার চিনলাম এক হাসপাতালের সামনে।
যেদিন প্রথম জেনেছিলাম মৃতপ্রায় রোগীর আর্ত-চিৎকার
কখনও তোমার হৃদয় অবধি পৌছায় না।
নিজের আঙ্গুলের ডগায় এক ফোঁটা রক্ত তোমার মাথা ঘুরিয়ে দেয়।
অথচ, করিডরের কোণায় পড়ে থাকা কারও কাটা হাতও
তোমায় তিল সম বিচলিত করে না।
এর পরেও তুমি নিজেকে মানুষ বলে মনে কর?
ধিক! তোমায় শত ধিক!
শত ধিক তোমার আভিজাত্যকে!
আমি মিছিলের অগ্রভাগে ঝাঁঝাল স্লোগান দিতে জানি না।
আমি পত্রিকার কলামে পুঁজিবাদকে তীব্র কষাঘাত করতে জানি না।
আমি সভা-সেমিনারে হৃদয়-স্পর্শী বক্তৃতা দিতে জানি না।
আমি টিভি-ক্যামেরার সামনে কেঁদে বুক ভাসাতে জানি না।
আমি আভিজাত্যের নামে নীচ হতে জানি না।
দু’হাতে টাকা ওড়াতে জানি না;
ঘৃণায় নাক সিটকাতে জানি না;
নিষ্ঠুর হতে জানি না;
নৃশংস হতে জানি না;
আমি শুধু ওদের পরম মমতায় বুকে আঁকড়ে ধরতে জানি।
আমি ভালবাসতে জানি।
Comments
Post a Comment