কর্ণধার

হে নাবিক দেখ সামনে তোমার পর্বতসম ঢেউ;
তুমি ছাড়া আজ থামাবেনা তারে কেউ।
মাটি ছেড়ে আজ সংগ্রামে তুমি এই রণবীর সাজে;
কর্ণকুহরে ভেরীর নিনাদ মেঘনাদ হয়ে বাজে।
তবু কি তোমার ভাঙ্গবেনা ঘুম জাগবে না তবু তুমি?
সাগরের এই ঝড়কে হারিয়ে যাবে কি’না তুমি ভূমি?
তব ভরসায় জাহাজের যত মাঝিমাল্লার দল,
হয়ে আছে নিশ্চল।
তুমি না জাগলে পথহারা সব অনুসারীর কী হবে?
ঝড় তাণ্ডবে নিশ্চিহ্ন নীরবে!
জাগবেনা যদি কেন নিয়েছিলে কাধে এই মহাভার?
এক ভুল তুমি কোরো না’ক বারবার।
জেগে ওঠো তুমি সামলাও এই তরী;
তখন প্রবল মাঝিদের দল যাবে না'ক নুয়ে পড়ি।
বাত্যা আরও প্রকট হয়েছে ছেয়েছে অন্ধকার।
বিপদের মাঝে অনুচর সব হয়েছে আজ অসাড়।
তোমার আশায় বসে আছে তারা, পরিকল্পনাহীন,
কোন ঋণ নেই, তবু এ তোমার অশোধযোগ্য ঋণ।


চিৎকারে তব ঘুম ভেঙ্গে গেছে, ভাঙ্গেনি ঘুমের ঘোর;
তাই বা হয়ত দেখনি নতুন ভোর।
নতুন ভোরের আলো বেয়ে চল এ আলেয়া হয়ে পার,
তব কাধে মহাভার।
এ তুফানে তুমি হয়ো না মোটে অসাড়,
তাতে যে আরও সুমত্ত হবে এ হিংস্র পারাবার।
বর্জ্র হস্তে তোল পাল জাহাজের
দেখবে তখন প্রচণ্ড ঝড়ে জাহাজ ছুটেছে ফের।
হয়োনা অসাড়, তাহলে তফাৎ থাকে কতটুকু আর?
মাঝি মাল্লাও সমান তবে তোমার
শ্রেষ্ঠত্বেই, সেই হেতুতেই নাবিক এ পারাবারে।
তুমি শোন কি আমারে?
যদি শুনে থাক যেন তবে তুমি আজ;
তুমিই সবার কান্ডারী আজ তুমিই সবার রাজ।
আকাশের পানে চেয়ে দেখ সেথা ছেয়ে রয়েছে  তিমির
বাজুক আজকে হৃদয়ে তোমার নিনাদ রণভেরীর
আজ শুধু তুমি মিনতি আমার রাখো;
হৃদয়ের মাঝে ঘুমে পড়ে থাকা সাহসকে তুমি ডাকো।
পর্বতসম ঢেউ আছড়াক। ছেড় না’কো তুমি হাল।
জলোচ্ছ্বাসেই উড়াও উড়াও তব জাহাজের পাল।
অনুচর সব তোমার আপন নয় তারা কেউ পর
তারাই তোমার শিরের মুকুট গগনের দিবাকর।

যতদিন তুমি থাকবে কর্ণধার,
ত্যাজ্য ঝঞ্ঝা তোমার সামনে ফিরবে বারংবার
দ্বিধা সব রেখ হৃদয়ের মাঝে, কভূ প্রকাশ কোরোনা
হৃদের দন্দ্ব হৃদয়ের মাঝে মুছে দিতে কি পারনা?
দন্দ্ব সকল মাঝিকে ভাসাবে দুর্ভোগ-বেড়াজালে;
তখন কিইবা ঘটে যাবে ভাব তব জাহাজের ভালে।
তোমার সামনে বিদ্রোহ প্রতি-পলে।
তবু তুমি কভূ পাড়ি দিও না’কো ভীরু পুরুষের দলে।

হে নাবিক, তুমি তরীর শ্রেষ্ঠ বীর
ভয় পেও না’কো কভূ শুনে তুমি গর্জন জলধির
এই দুর্দিনে, বিপদের এই নিকষ আঁধার রাতে
ভেবোনা কখনো লড়াই করবে, আগামীদিনের প্রাতে।
উদ্দাম জলে নীল সাগরের বুকে;
চেয়ে দেখ সব অনুচরগণ তোমাতে রয়েছে ঝুকে
সে ঘুম ভেঙ্গেছে, সে ঘোর কেটেছে, জাগ্রত কি হৃদয়?
পশ্চাতে তব তরীতে সকল অনুসারী নিশ্চয়
জেনেছে তোমাকে মুক্তির দেবদূত
তোমাতে দেখেছে তারা বিজয়ের সুত।

সামনে দাড়াও তোমার তরীর;
কর্ণে বাজাও নিনাদ ভেরীর;

হবে আয়োধন আজ ঝঞ্ঝার তরে;
জেগে গেছ তুমি, নেবে আজ তরী বিজয়ের বন্দরে।

Comments

Popular posts from this blog

নিকষ

বাংলা কবিতায় ছন্দ ; কিছু প্রাথমিক আলোচনা

স্বাতন্ত্রিক