ধর্মানুভূতির সংজ্ঞা চাই...

ধর্মানুভূতির সংজ্ঞাটা কি কেউ আমাকে দিতে পারেন? কোন রেফারেন্স লাগবে না, কোন মহৎ ব্যক্তি দ্বারা উদ্ধৃত হতে হবে না। স্রেফ একটা যৌক্তিক সংজ্ঞা।
যে সংজ্ঞা দ্বারা আমি খুব ভাল ভাবে বুঝতে পারব, কীভাবে শাহবাগে কোরআন পোড়ানোর মিথ্যে গুজবে মানুষের ধর্মানুভূতিতে আঘাত লাগে, কিন্তু হেফাজতের কোরআন পোড়ানোর সত্যি খবরে তাতে আঁচও লাগে না।
শাহবাগে ৮ই ফেব্রুয়ারি যে গণজাগরণ দেখেছিলাম তাতে ভাটা পড়তে শুরু করে মূলত ব্লগার রাজীবকে হত্যার পর শুরু হওয়া নাস্তিকতা বিতর্কের জন্যই। যেখানে ইমরান এইচ সরকারের কোন ব্লগিং ব্যাকগ্রাউন্ডই নেই, সেখানে তাকে উপাধি দেয়া হয় নাস্তিক ব্লগার। শুরুর প্রথম দিন থেকেই আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল আমরা নাস্তিক, আমরা ইসলামের বিরোধিতাকারী ইত্যাদি ইত্যাদি অজস্র।
দেশের প্রতি গ্রামে, চায়ের দোকানে, নিছক আড্ডায় প্রচণ্ডভাবে ছড়িয়ে পড়া এসব গুজবে বিশ্বাস করে দেশের অজস্র মানুষই। তার প্রমাণ আমরা দেখেছি, হেফাজতের মহাসমাবেশদ্বয়ে। যদিও এখানে উপস্থিত বেশির ভাগই ছিল মাদ্রাসার ছাত্র যারা আসতে এক রকম বাধ্য। কিন্তু, এটা কেউ অস্বীকার করতে পারবেন না যে, জামাতের পরিকল্পিতভাবে ছড়ানো গুজবে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের বেশিরভাগ মানুষ বিশ্বাস করতে বাধ্য হন যে, শাহবাগে যারা আছে তারা নাস্তিক। যদি তাই সত্য হত, তবে বলতে হয়, দেশে আস্তিকরাই বরং সংখ্যালঘু।
একটু পেছন ফিরি। ৪২ বছর আগে। হাতে কোরআন থাকলেও ‘সালে কাফের কি আওলাদ’ বলে যেভাবে গুলি চালানো হত, এখনও সেভাবে যথেচ্ছাচারে সবাইকে দেয়া হচ্ছে নাস্তিক উপাধি। একজন মুসলিমকে নাস্তিক উপাধি দিলেও কারও ধর্মে লাগে না।

কারও ধর্মানুভূতি বিন্দুমাত্র আহত হয় না, যখন একবারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া সব ছাত্রছাত্রীদের নাস্তিক বলা হয়। বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কি আদৌ ‘ইসলামিক স্টাডিজ’ বলে কোন বিষয় পড়ানো হয়। যারা পড়ছে, তারাও কি নাস্তিক? তবে দেশে আস্তিক কারা? যাদের ধর্মানুভূতি স্বেচ্ছায় কখনও কখনও আহত আবার কখনও নিহত হয়। এর পর স্রষ্টার কৃপায় আবার পুনর্জীবিতও হয়।
তাদের ধর্মানুভূতিতে ভুলেও কখনও আঘাত লাগে না, যখন কেউ ধর্মের নাম নিয়ে গাড়ি ভাঙচুর করে, যখন কেউ ধর্মের নাম নিয়ে দোকান ভাঙচুর করে, যখন কেউ ধর্মের নাম নিয়ে দোকান লুটপাট করে, যখন কেউ ধর্মের নাম নিয়ে মানুষ খুন করতেও দ্বিধা করে না। পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্ম ইসলামকে যারা বেহেশত হতে রসাতলে নামিয়ে আনে তখন কারও ধর্মানুভূতিতে ফুলের টোকাও লাগে না। কিন্তু, ধর্ম নিয়ে একটা শব্দ পর্যন্ত উচ্চারণ না করে, বরং মহাসমাবেশগুলোর আগে পবিত্র গ্রন্থ থেকে পাঠ করিয়ে গণজাগরণ মঞ্চ আঘাত করে সবার ধর্মানুভূতিতে। এর কোন সংজ্ঞা কি কেউ দিতে পারেন?
সব শেষে বলবার মত একটা কথাই থাকে, “অদ্ভুত হেলিকপ্টারের নিচে ঝুলছে ধর্মানুভূতি”।

ইস্টিশন ব্লগ: http://istishon.com/node/1661

Comments

Popular posts from this blog

নিকষ

বাংলা কবিতায় ছন্দ ; কিছু প্রাথমিক আলোচনা

স্বাতন্ত্রিক