বৃষ্টিবিলাস অধ্যাদেশ
তারপর একদিন অধ্যাদেশ জারী হবে বৃষ্টি বিলাসের।
তারপর একদিন বৃষ্টি হবে।
তারপর একদিন বৃষ্টি হলে,
সহসাই সময়েরা স্থির হয়ে যাবে।
স্যারের ঘুম পাড়ানি গান শুনতে শুনতে,
সবচেয়ে দুষ্টু মে’টা সহসাই চমকিত হয়ে উঠবে প্রবল তর্জন গর্জনে।
পুনরায় বৃষ্টি হলে সকলের জলস্নান বাধ্যতামূলক করা হবে।
সবচেয়ে ঘরকুনো ছেলেটাই চুপিচুপি বারান্দা পেরিয়ে,
দু’হাত বাড়িয়ে দেবে অঝোরেতে।
বিল্ডিং পেরিয়ে চোখ বাড়াবে নীল বরণা তরুণীতে।
তারপর একদিন বৃষ্টি হবে।
তারপর যেইদিন আকাশটা ভেঙ্গে যাবে,
সকল স্কুল-অফিস-আদালত-কর্মক্ষেত্র অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য স্থগিত ঘোষণা হবে।
কর্পোরেট স্বামী ঘরে ফেরার রাস্তায়_
নীল একটা গোলাপ কিনে নেবে সহসাই।
সেই নীল গোলাপটা সাবিত্রিকে হাঁটু গেড়ে অর্পণ করবে,
না লুকিয়ে বিছানাতে রেখে দেয়া হবে—
তা নিয়ে বৃষ্টি-বিলাস অধ্যাদেশে সুনির্দিষ্ট কিছু থাকবে না।
আবার যেদিন সূর্য লুকোচুরি খেলবে,
মোড়ে টংয়ের দোকান ছাড়া আর কিছু খোলা থাকবে না সেইদিন।
বেশ কড়া লিকারের একটা চায়ের সাথে,
এক শলা গোল্ডলিফ শক্ত করে টান দেয়া হবে শুধু_
কেউ যেন সেটা রেগে টান দিয়ে ফেলে দেয়।
বৃষ্টি-বিলাস শীর্ষক অধ্যাদেশে কারো ফাঁকা একক হাত নিষিদ্ধ।
সব বৃষ্টি-বিলাসীদের ‘কোনও একজনের’ হাত আঁকড়ে রাখতে হবে শক্ত করে।
তারপর একদিন বৃষ্টি হবে।
তারপর একদিন জাতীয় বৃক্ষটা হবে — বৃষ্টিস্নাত ঘাস।
মেঘের তর্জন শুনে ক্লাস ফেলে সব ছেলে-মেয়ে
দাপিয়ে বেড়াবে স্কুল-মাঠে।
ফুটবলের বদলে নিজেদের ওপরেই আছড়ে পড়ার সুখ ছোঁবে সেদিন সবাই।
যেদিন বৃষ্টি-বিলাস অধ্যাদেশ জারি হবে,
সবচে’ কঠোর-রাগী বাবাটারও মেয়ের কপালে চুমু খাওয়া বাধ্যতামূলক হবে।
আরও একটা চুমু স্ত্রীর ঠোঁটে আঁকা হবে কি’না সে বিষয়ে রাষ্ট্র হস্তক্ষেপ করবে না।
তারপর একদিন বৃষ্টি হবে।
তারপর একদিন আকাশের নীল রং জলেদের হাত ধরে নেমে আসবে ধরায়।
সেদিন রাষ্ট্রের পতি হবে কবি।
প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রীরা, আমলারা, সচিবেরা, … — সবকিছু হবে কবিরা।
বৃষ্টি-বিলাস শীর্ষক অধ্যাদেশ অনুসারে রাষ্ট্রের সুনাগরিকের প্রধান কর্তব্য হবে—
কবিতা রচনা।
বৃষ্টি বিলাসী রাষ্ট্রের জাতীয় খাবার হবে — চুমু।
সেটা কপালে না ঠোঁটে আঁকা হবে— সেই সব,
নাগরিক অধিকার হিসেবেই বিবেচনা করা হবে।
তারপর একদিন বৃষ্টি হবে।
সেদিন থেকে ট্রেনের হুইসেল হয়ে যাবে মেঘেদের গুড়গুড়।
ঝিকঝিক শব্দসব হয়ে যাবে রিমঝিম।
প্রবল-প্রচণ্ড বেগে দৌড়ে দৌড়ে সহসাই উড়তে শুরু করবে।
ক্লান্ত শালিক পাখিটা কিছুক্ষণ জানালায় জিরিয়ে নিয়ে আবার উড়তে শুরু করবে।
প্রাকৃতিক মেঘ আর যান্ত্রিক ট্রেন সেদিন এক রেখায় ছুটবে একসাথে।
তারপর, বৃষ্টি হলে রিকশারা গড়াগড়ি খাবে ধূলোদের সাথে।
গাড়ির আবছা কাচে ফুটপাত দেখা ছেলে,
সে দিনটায় রাষ্ট্রীয় অনুমোদনে দেয়াল পেরিয়ে আকাশ ছোঁবে।
সেদিন সে ঘাস হবে না ধূসর ধূলো হবে, সেটা অধ্যাদেশটির নিয়ন্ত্রণাধীন নয়।
সেদিন, সেনাবাহিনী যুদ্ধ ঘোষণা করবে অনাবৃষ্টির বিরুদ্ধে।
তারপর, হাইকোর্ট রুল জারী করে যাবে সূর্যের বিরুদ্ধে।
সেদিন, পুলিশ শুধু উপরি নেবে বৃষ্টিতে না ভেজার অপরাধে।
তারপর, সুশীলেরা বৃষ্টির নীলত্ব কমা নিয়ে খুব হাহাকারী কলাম লিখবে।
সেদিন, দার্শনিকরা নূতন নূতন তত্ত্ব দেবে বৃষ্টি নিয়ে।
তারপর, ঘাসদের মৃত্যুতে জাতীয় শোক প্রকাশিত হবে।
সেদিন, প্রধান আর বিরোধী দলীয় নেত্রী প্রথম অঝোর বৃষ্টি উপলক্ষে সুবিশাল বিবৃতি দেবেন।
তারপর, শব্দরাও বৃষ্টি-বিলাসী হবে কি, সেটা কবির ওপর নির্ভরশীল থাকবে!
তারপর একদিন বৃষ্টি হবে।
তারপর একদিন বৃষ্টি-বিলাস শীর্ষক অধ্যাদেশ জারী হবে।
Comments
Post a Comment