মেঘটা

 নিযুত বছর আগে এক শ্রাবণ-সংক্রান্তির রাতে

আমাকে একটা মেঘ ধরিয়ে দিয়েছিল শ্রাবন্তিকা।

কাজলের মত; কুয়াশার মত; নির্বোধ-মত একটা মেঘ।


আমি মেঘটা ধরলাম।

উল্টে পাল্টে দেখলাম।

আঙ্গুল গলে গড়িয়ে পড়ছে দেখে —

“সুন্দর হয়েছে” বলে আমি চুপচাপ মেঘটা 

সাতটি তারার তিমিরে পুরে রেখেছিলাম।

মেঘটা গুটিসুটি করে চুপচাপ বইয়ের ভাঁজে পড়ে ছিল।

মেঘটা।


শ্রাবন্তিকার দেয়া আরও হাজারও উপহারের মত

মেঘটার কথাও আমি ভুলে গিয়েছিলাম।

আজ সন্ধ্যায় শেলফ খুলতে গিয়ে হঠাৎই শুনি প্রবল বর্জ্রপাত।

জিউস আর থরের যুদ্ধে আমার কিছু করার নেই ভাবনায় —

আমি শেলফটা খুলতেই চমকে উঠি।

বইয়ের প্রতিটি তাক মরুভূমি আর

প্রবল খরতাপে পুড়ে গেছে প্রতিটি অক্ষর।

মরিচিকার ধোঁয়ার সাথে তাল মিলিয়ে ওপরে তাকাতেই দেখি —

মেঘটা।


আমি চোখ বন্ধ করে ফেলি;

যেমন করে চোখ বন্ধ করে ফেলছি প্রতিদিন।

আমি দেখতে চাই না —

আমার সব গল্প পুড়ে গেছে।

আমার সব বাক্য পুড়ে গেছে।

আমার সব শব্দ পুড়ে গেছে।

আমার সব অক্ষর পুড়ে গেছে।

সেই পোড়াভূমিতে মরিচিকার ছায়া হয়ে আছে —

মেঘটা।


অভিমানের মত ছোট্ট মেঘটা —

বইয়ের ভাঁজে যাকে নিমিষেই লুকিয়ে রাখা যেত;

সে ঘৃণার মত বিস্তৃত হয়ে ঢেকে রেখেছে আমার সবখানি।

থরের হাতুড়ির চেয়েও তীব্র গর্জনে কাঁপিয়ে দিচ্ছে আমার অলিন্দের দরোজা।

প্রবল মেঘটা ঝরে পড়ে।

ভাসিয়ে নিয়ে যায় আমার একান্ত মরুভূমি।

আমার মরিচিকা।


আমি শেলফটা বন্ধ করি।

নিযুততম বার।

মেঘটা জড়িয়ে রাখে সাতটি তারার তিমির।

মেঘটা।

Comments

Popular posts from this blog

ক্লেদ

কল্পনার ওপাশে

বৃষ্টিবিলাস অধ্যাদেশ