Posts

Showing posts from March, 2014

এই শহরের আকাশটাতে মেঘ জমেছে

-আসছে? -না এখনও আসে নাই। -আর কতক্ষণ? -আমি কী জানি কখন আসবে? আমি তো চারটা থেকেই দাড়ায় আছি সৌরভের জন্য। -আচ্ছা ঠিক আছে। আমরা সব আছি ৪ নাম্বার রোডে। একুশে একাডেমীর গলিতে। -ঠিক আছে। তোরা আড্ডা দে। ওরে নিয়ে সন্ধ্যার দিকেই আসব। আলো থাকলে ঝামেলা। ফোনটা কেটে দিলাম। রাকিন নিশ্চিত চেতছে। করার কিছু নেই। সৌরভ দেরি করছে, সেটা আমার দোষ না। সময় কাটানোর জন্য কিছু নিয়ে চিন্তা করা যায়। কী নিয়ে? কী নিয়ে? আচ্ছা, সিগারেট চায়ের সাথে খেলে নিকোটিন বেশিরভাগ অংশ চলে যাবে, পাকস্থলীতে। কিন্তু, তাতে পিনিক বাড়ে কেন? কেন বাড়ে তা নিয়ে চিন্তা করার সময় পেলাম না। সৌরভ এসে গেছে। আমার সামনে এসে অনিশ্চিত ভঙ্গিতে দাঁড়াল। জিজ্ঞেস করলাম, “সৌরভ?”

ডাস্টবিনের কবিতা

তেরটি কবিতা আজ ছুড়েছি ডাস্টবিনেতে। একটি কবিতা আজ অফিস-ক্লান্ত হয়ে একটা লাল গোলাপ কিনে ফিরে আসছিল মাধবীলতার তরে। যে মাধবীলতা আজ এক পেয়ালা চা নিয়ে দাড়িয়ে ছিল ও আছে। কবিতাটা আর নেই। আর দুইটি কবিতা শেষ বিকেলের রোদে স্নান শেষে ফিরছিল যে যে যার যার ঘরে। একটুকু ভালবাসা দুইহাতে চেপে ধরে বালক আর বালিকা প্রতিজ্ঞা করেছিল, এই হাত ছাড়বে না। এখনও দুজনকে ধরে আছে দুইজনে। শুধু নেই কবিতারা।

অধরা

এ জন্ম বাদ থাক। শুভ্র স্বপ্ন, স্বপ্ন হয়েই থাক। এবং মিলিয়ে যাক কৃষ্ণ গহ্বরে। এক জনমে কতটা একাত্ম হতে পারি? কতটা পৃথক? বড়জোর দুটো হাত ধরব দুজন। যদি খুব বেশি হয়, তোমার হৃদয় বিমূর্ত হয়ে হয়ে একদিন হয়ে যাবে আমার হৃদয়। এরচেয়ে বেশি কিছু, আরও একাত্মতা চাইতে পারি কি? পদার্থবিদ্যার নিয়ম বা অনিয়মে আরও আপন হব কি দুইজনে? জীবন জনমে?

ফেলানী, মায়াকান্না, চিৎকার এবং...

ইরফান সাহেব আজ একটু বেশিই ক্লান্ত। অফিস আওয়ারের পরেও আরও প্রায় ঘণ্টা-খানেক ছিলেন অফিসে। বিশেষ কোন কাজ ছিল না। কিন্তু, আলোচনাটা এমন জমে উঠল, তিনি আর উঠতে পারলেন না। বাসায় ফিরে হাতমুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে বেডরুমে ঢুকেই বড়সড় একটা ধাক্কা খেলেন। তার ত্রিশোর্ধ্ব স্ত্রী শামীমা বিছানায় কেঁদে বুক ভাসাচ্ছেন? সাথে সাথে তিনি ব্যস্ত হয়ে উঠলেন, “কী হয়েছে? এভাবে কাঁদছ কেন?” শামীমার কান্না যেন থামেই না। কাঁদতে কাঁদতে তার হেঁচকি উঠে গেল। ইরফান সাহেব আরও ব্যস্ত হয়ে উঠলেন, “আহা! কী হয়েছে, বলবে তো না’কি?” নাকের জল চোখের জল এক করে শামীমা যা বলল তার সারমর্ম হচ্ছে, সে নিয়মিত যে ছয়টা সিরিয়াল দেখত, তার একটার নায়িকা পৃথিলার আজকে হাতে গুলি লেগেছে।

ফেলানী, ভারতীয় পণ্য বর্জন, কিন্তু কেন?

ফেলানী হত্যার প্রহসনমূলক রায়ের পর আমাদের ভারতীয় পণ্য বর্জনের ঘোষণায় অনেক সুশীলের মাঝেই তীব্র চুলকানি দেখা গেছে। ভারতীয় পণ্য বর্জনের সাথে রবীন্দ্রনাথ-জীবনানন্দ-সুনীল এর সাহিত্য বর্জনের কথা বলে ত্যানা পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে যারা রীতিমতো মমি তৈরি করে ফেলেছেন, তাদের কাছে বিষয়টি পরিষ্কার করি। আর যারা ফেলানী হত্যার সাথে ভারতীয় পণ্য বর্জনের সংযোগ খুঁজে খুঁজে হয়রান হয়ে গেছেন, তাদের জন্যেও তাদের হয়ে আমি সংযোটা খুঁজে দিচ্ছি। সাহিত্য একটি সার্বজনীন বিষয়। একে কখনই দেশ-কাল-সীমানার গণ্ডি দিয়ে আটকে রাখা যায় না। যায় না বলেই, জোড়াসাঁকোর রবিঠাকুর লেখেন বাংলাদেশ আর  শ্রীলঙ্কার জাতীয় সংগীত । চুরুলিয়ার দুখু মিয়া হন বাংলাদেশ এর জাতীয় কবি নজরুল। জীবনানন্দ দাশের কবিতায় আমরা খুঁজি বাংলার সৌন্দর্য। পশ্চিমবঙ্গের কিংবা বাংলাদেশ এর নয়। আমরা যেমন আমাদের সবচেয়ে বড় অহংকারকে খুঁজি হুমায়ুন আহমেদের "জ্যোৎস্না ও জননীর গল্প" এ ঠিক তেমনি আমাদের শেকড়কে খুঁজি সুনীলের "পূর্ব-পশ্চিম" এ। সবচেয়ে বড় কথা আমাদের সাহিত্য গড়ে উঠেছে এদের নিয়েই। এরা আমাদের সাহিত্যের ও অংশ। কখনই তার ওপর আঘা...

বাংলা কবিতায় ছন্দ ; কিছু প্রাথমিক আলোচনা

আমরা অনেকেই হয়তো করেছি কবিতা আবৃতি। স্কুলের বাৎসরিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে হাত পা নেড়ে নেড়ে আবৃতি করেছি - ভোর হল দোর খোল খুকুমণি ওঠো রে ওই ডাকে জুঁই শাঁখে ফুলখুকি ছোট রে। কিন্তু, কখনও কি খেয়াল করেছি, "ভোর হল" কিংবা "জুঁইশাঁখে" বলার পর নিজের অজান্তেই কিছুক্ষণের জন্য থেমে যাচ্ছি? কেউ কেউ হয়তো করেছি। কিন্তু, বেশিরভাগ এরই অবচেতন মনে ঘটেছে ঘটনাটি। এই থেমে যাওয়া থেকেই ছন্দের শুরু।

নারীর উন্মুক্ত মুখ কিংবা পুরুষের পশ্চাদ্দেশের কথকতা...

প্রায় মাস খানেক আগের ঘটনা। এবারের HSC পরীক্ষার্থীদের একটা গ্রুপে এক ছেলে, “ মেয়েদের পর্দার প্রয়োজনীয়তা এবং অন্যান্য হ্যান ত্যান সিলিং ফ্যান ” নিয়ে একটা জ্ঞানগর্ভ পোস্ট প্রসব করল। আমি সেখানে গিয়ে কমেন্ট ঝাড়লাম, “ তাহারা মেয়েদের উন্মুক্ত মুখমণ্ডল দেখিয়া গেল গেল গেল বলিয়া লাফাইয়া ওঠে। কিন্তু, ছেলেদের উন্মুক্ত পশ্চাদ্দেশও কখনও তাহাদের ভাবান্তর ঘটায় না। ” ব্যাস শুরু হয়ে গেল! চলল তর্কযুদ্ধ। এবং চিরাচরিতভাবেই তাহাদের শেষ কথা ছিল, “ কোরআনে এখানে কী বলা আছে, তা বোঝার সামর্থ্য তোমার নাই। ভাল কোন আলেমের কাছ থেকে এসবের মানে জেনে এসে তারপর কথা বল। ” তবে সেদিনই ঠিক করে রেখেছিলাম, কোরআন বোঝার মত জ্ঞানগরিমা না থাকলে এতদসম্পর্কিত কথাগুলো নিয়ে একটা ব্লগপোস্ট লিখব। আমার মহিমান্বিত পিসির সুবাদে এতদিন লেখা হয়নি। আজকে আলসেমি ফেলে শুরু করেই দিলাম।

ভবঘুরে স্মৃতি

ঠিক এক বছর আগে... নাহ! দু'বছর। কী! দু'বছর হয়ে গেছে? এতটা সময় কখন পার হল? কে জানে? সময়টাই এমন। সে সব সময় একই গতিতে যায়, অথচ আমরাই বলি সে দ্রুত সে শ্লথ। অনেক অনেক কাল আগে যে কালের ব্যাপ্তি পুরো দুই বছর, এক দেশে দু'টো ছেলে বাস করত। গল্পের স্বার্থে আমরা একজনের নাম ধরে নিই 'বৈশাখ' আর একজন 'রৌদ্র।' গল্প লিখতে হলে যেমন বিশেষত্ব থাকতে হয় তেমন কিছুই ছিল না তাদের। তাদের বিশেষত্ব ছিল একটাই, তারা হাঁটত। সময়ের চেয়েও দ্রুত, কালের চেয়ে শ্লথ গতিতে তারা হাঁটত "সাত নদী তের সমুদ্দুর" পেরিয়ে তেপান্তরের নিকষ স্তব্ধতায়। দু'টো ভবঘুরে।

'বাংলার শ্রেষ্ঠ প্রতিভা' বিষয়ক স্মৃতিকথা

মোটামুটি চৌদ্দটা বছর তার সাথে আমার পরিচয় ছিল দু’টো লাইন দিয়ে। বল বীর বল উন্নত মম শির। কবিতার চেয়ে আড্ডাবাজিতেই বেশি আগ্রহ থাকায় আর সামনে এগোনো হয় নি। চট্টগ্রাম থেকে আব্বু ট্রান্সফার হয়ে ঢাকায় আসায়, ক্লাস নাইনে চলে এলাম ঢাকায়। কৈশোরের উচ্ছ্বলতার পাট চুকিয়ে খানিকটার ধীমান হতে শিখেছি। কীভাবে কীভাবে যেন কবিতা লেখার অভ্যাস হয়ে গেল(কারও প্রেমে পড়ি নাই কইলাম!) লিখতে গিয়ে ভাল মতই টের পাচ্ছিলাম, কবিতা না পড়ে লেখা যায় না। তখন আবার নতুন নতুন আস্তিকতায় ‘রিভার্ট’ করেছি। ধর্মানুভূতি(!) তখন তুঙ্গে। কাফের মুরতাদ(?) রবিঠাকুরের কবিতা পড়া আমার সাজে না। তাই নজরুলকেই আঁকড়ে ধরলাম।

পিশাচ মুজাহিদের রায় এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শীর্ষক পর্যালোচনা

শুরুর আগে আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগগুলোর দিকে খানিকটা আলোকপাত করি: প্রথম অভিযোগ : ১৯৭১ সালের ১০ই ডিসেম্বর চামেলীবাগ থেকে সাংবাদিক সিরাজ উদ্দিন হোসেনকে অপহরণ করা হয়। মুজাহিদের পরিচালনাধীন ও নিয়ন্ত্রণাধীন ৭-৮ জন যুবক তাকে ধরে মিনিবাসে তুলে নেয়। আজ পর্যন্ত তার কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগে জানানো হয়। দ্বিতীয় অভিযোগ : ১৯৭১ সালের মে মাসে একদিন আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের নেতৃত্বে ফরিদপুর জেলার চর ভদ্রাসন থানার বিভিন্ন গ্রামের ৩০০-৩৫০ বাড়ি পুড়িয়ে দেয় পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকাররা। পরে এলোপাথাড়ি গুলি ছুঁড়ে ৫০-৬০ জন হিন্দু নরনারীকে হত্যা করা হয়।

২৫শে মার্চ বনাম ৬ই মে

এতক্ষণে শুরু হয়ে গেছে। খুব ভাল ভাবেই শুরু হতে দেখছি, গতকালের পুলিশ-র‍্যাব-বিজিবির সম্মিলিত অভিযানকে ২৫ মার্চের ভয়াল রাতে সংঘটিত অপারেশন সার্চলাইটের সাথে তুলনা। সেটা নিয়েই কিছু যৌক্তিক কথা বলব। প্রথমেই যাই প্রেক্ষাপটে: ২৫শে মার্চের আগে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য বলা যায়, বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ। সেখানে তিনি কিন্তু, আমাদের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন নি। কেন দেন নি? কারণ, এর অর্থই হচ্ছে পাকিস্তানী মিলিটারির হাতে একটা ইস্যু তুলে দেয়া হবে। বঙ্গবন্ধু তা করেন নি। অপর দিকে ৫ই মে সন্ধ্যায় বাবু নগরী, সরকারের উদ্দেশ্যে বললেন “কীভাবে পালাবেন পথ বের করেন।” তারও আগে বলা হয়েছিল ৫ই মে’র পর থেকে দেশ চালাবে হেফাজত। অর্থাৎ, সরাসরি রাষ্ট্রদোহীতা।

ধর্মানুভূতির সংজ্ঞা চাই...

ধর্মানুভূতির সংজ্ঞাটা কি কেউ আমাকে দিতে পারেন? কোন রেফারেন্স লাগবে না, কোন মহৎ ব্যক্তি দ্বারা উদ্ধৃত হতে হবে না। স্রেফ একটা যৌক্তিক সংজ্ঞা। যে সংজ্ঞা দ্বারা আমি খুব ভাল ভাবে বুঝতে পারব, কীভাবে শাহবাগে কোরআন পোড়ানোর মিথ্যে গুজবে মানুষের ধর্মানুভূতিতে আঘাত লাগে, কিন্তু হেফাজতের কোরআন পোড়ানোর সত্যি খবরে তাতে আঁচও লাগে না। শাহবাগে ৮ই ফেব্রুয়ারি যে গণজাগরণ দেখেছিলাম তাতে ভাটা পড়তে শুরু করে মূলত ব্লগার রাজীবকে হত্যার পর শুরু হওয়া নাস্তিকতা বিতর্কের জন্যই। যেখানে ইমরান এইচ সরকারের কোন ব্লগিং ব্যাকগ্রাউন্ডই নেই, সেখানে তাকে উপাধি দেয়া হয় নাস্তিক ব্লগার। শুরুর প্রথম দিন থেকেই আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল আমরা নাস্তিক, আমরা ইসলামের বিরোধিতাকারী ইত্যাদি ইত্যাদি অজস্র। দেশের প্রতি গ্রামে, চায়ের দোকানে, নিছক আড্ডায় প্রচণ্ডভাবে ছড়িয়ে পড়া এসব গুজবে বিশ্বাস করে দেশের অজস্র মানুষই। তার প্রমাণ আমরা দেখেছি, হেফাজতের মহাসমাবেশদ্বয়ে। যদিও এখানে উপস্থিত বেশির ভাগই ছিল মাদ্রাসার ছাত্র যারা আসতে এক রকম বাধ্য। কিন্তু, এটা কেউ অস্বীকার করতে পারবেন না যে, জামাতের পরিকল্পিতভাবে ছড়ানো গুজবে দেশ...

ষোল আনা, বাঙালিয়ানা

“এক ঘণ্টার মধ্যে বেশিরভাগ জাপানী সৈন্য নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। তারা হয় নিজেদের গুলিতে আত্মহত্যা করে অথবা আমাদের গুলিতে মারা যায়। তারা কখনও আত্মসমর্পণ করে নি। দলের কমান্ডার তখনও জীবিত। তিনি ছিলেন গর্বিত ও দুঃসাহসী। তিনি অবজ্ঞার সাথে তার তলোয়ার উঁচু করে ধরলেন এবং আমাকে আহ্বান করলেন তার সাথে দ্বন্দ্বযুদ্ধ করতে।” -লেফটেন্যান্ট জেনারেল নিয়াজী (দ্য বিট্রেয়াল অব ইস্ট পাকিস্তান: পৃষ্ঠা ২৬) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে এভাবে মুখ থুবড়ে পড়ার পরও জাপান এত কম সময় এত দ্রুত কীভাবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াল এবং বিশ্বের দ্বিতীয় অর্থনৈতিক শক্তি(বর্তমানে তৃতীয়) হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করল তার এর চেয়ে বড় উত্তর বোধ হয় হতে পারে না। তাদের উন্নতির এক এবং একমাত্র কারণ হচ্ছে, নিজেদের জাতীয়তার প্রতি তাদের প্রবল অহংকার। প্রবল জাত্যভিমান তাদের রক্তে মিশে আছে।

দর্পন

ক - ১ সালমা রুদ্ধশ্বাসে দৌড়াচ্ছে। দিগ্বিদিক কোন খেয়াল নেই। দৌড়াচ্ছে। কোথায় যাচ্ছে, কোন খেয়াল নেই। দৌড়াচ্ছে। 'দৌড়াচ্ছে' শব্দটা অবশ্য ভুল। ভেসে যাচ্ছে। স্রোতটা যেদিকে যাচ্ছে, তার সাথে নিয়ন্ত্রণহীন ভাবে ভেসে যাচ্ছে। মানুষের স্রোত। ওড়নাটা হঠাৎ রাস্তার ধারে একটা কাঁটাগাছের সাথে আটকে গেল। ছাড়িয়ে নেয়ার সময় নেই। ওড়না ফেলেই দৌড়াচ্ছে। সলিমের ডান পায়ের বুড়ো আঙ্গুলের নখ উপড়ে গেছে। এখন পর্যন্ত তার সেদিকে খেয়াল নেই। সেও দৌড়াচ্ছে। রুদ্ধশ্বাসে! আজহার খানিকটা পেছনে পড়ে গেছে। ল্যাংচাতে ল্যাংচাতে সে এগোচ্ছে। সে গোসল করছিল। হঠাৎ চিৎকার শুনল "খানসেনা।" সাথে সাথে ভেজা শরীরেই দৌড় দিল। কিন্তু, পুকুরের পাড় বেয়ে উঠতে গিয়ে আছাড় খেল। হাঁটুর কাছে কেটে গেছে। পাও মচকে গেছে। কিন্তু, এখন এতসব ভাবার সময় নেই। সেও দৌঁড়াচ্ছে। সবার পেছনে পড়ে গেছে পোয়াতি আমিনা। খানসেনার কথা শোনার পরেও দৌড় দিতে পারে নি। রঞ্জুটা এত বাদর হয়েছে। তাকেই খানিকক্ষণ খুঁজল আশেপাশে। রঞ্জু রঞ্জু বলে চিৎকার করে একাকার করল। তারপর মনে হল, পুরো গ্রামের লোকজনের সাথে রঞ্জুও নিশ্চয়ই পালিয়ে যাবে। সেই চিন্তা থেকেই সেও দৌড় দিল...

নির্দ্বিধায়...

(২) -রাইসা, মাছের কাঁটা খায় বাইছা বাইছা। :শালা কুত্তা! পচাইতে চাইলে নিজে কিছু বানাইয়া পচাবি। জাফর ইকবালের লাইন চুরি করে পচাস ক্যান? নিজের কিছু করার সাধ্য নাই? -হে হে হে! আমি তো VIP মানুষ। তোরে পচানোর জন্য বসে বসে ছড়ার লেখার টাইম আছে না'কি আমার? তাই, খোদ জাফর ইকবালই আমার হয়ে তোর নামে পচাইয়া ছড়া লিখে ফেলাইছে। :শালা কুত্তা! রাইসা গজগজ করতে করতে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। তার এখন কান্না পাচ্ছে। প্রচণ্ড কান্না পাচ্ছে। তমালটা এমন কেন? সবসময় তাকেই পচাবে। ও কি কিছু বোঝে না? ছেলেরা এত বোকা হয় কেন? পৃথিবীর আর কেউ যা খুশি বলুক, রাইসার কিছু আসে যায় না। কিন্তু, তমালের সামান্য একটা কথা রাইসার কাছে অনেক কিছু। আচ্ছা, তমালের একটা কথা রাইসার কাছে অনেক কিছু কেন? রাইসার নিজের ওপর রাগ লাগতে শুরু করেছে। মরার কান্নাটাও থামছে না। কেউ যদি এখন দেখে ফেলে, এই বুড়োধাড়ি মেয়ে ভেউ ভেউ করে কাঁদছে, কি কেলেঙ্কারিটাই না হবে!

সে নেই!

তার সাথে আমার পরিচয় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। শিখা চিরন্তনের দু'পাশে যে দু'টো উঁচু ঢিবির মত 'কিছু একটা' আছে, সেখানে বসে ছিলাম তখন আমি।  তার সাথে দেখা হওয়াটা খানিকটা অদ্ভুত! টিলার পাশে বারো ফুট উঁচু দেয়ালের ওপর বসে আমি তখন পা নাচাচ্ছি। হাতে ছিল একটা জয়েন্ট। চার শলার গাঁজা একটাতে। সুগার ছাড়া। 'সেইরকম' মাদকতা। একা একা এই জিনিসের সুযোগ প্রতিদিন হয় না। আজকে সবাই আসার আগেই একটা শেষ করি। সাধারণত এমন সুযোগ পাওয়া যায় না। আমি আনমনে মাথা দোলাচ্ছি। কানে এয়ারফোনে Pinik Floyd এর High Hopes বাজছে। বাতাসটা যেন দুলছে। অনেক দূরে কোথাও থেকে যেন একটা গির্জার ঘণ্টার শব্দ ভেসে আসছে। বাতাসটা তার সাথে সাথে উঁচু নিচু হয়ে ঢেউয়ের মত এগিয়ে আসছে। ইটের ভাটার মত ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে, আমিও তার সাথে পা দোলাচ্ছি। হঠাৎ পা থেকে স্যান্ডেল খুলে পড়ে গেল। পায়ে স্যান্ডেল নেই বুঝতে পেরে আমি নিচে তাকাতে না তাকাতেই নারীকণ্ঠের তীব্র চিৎকার ভেসে এলো - “ওই! এই স্যান্ডেল কোন হারামি, বান্দর, চামচিকার বাচ্চা, ইন্দুরের ছাও, টিকটিকির আণ্ডা, তেলাপোকার বিষ্ঠা...”

পথ

“রা'আদ ভাই, গল্প তো আরেকটা লাগবে। হাজার দেড়েক শব্দের।” নির্ঝর ঘরে ঢুকতে ঢুকতে কথাটা রহমান রা'আদের দিকে ছুড়ে দিল। রা'আদ সাহেব অবাক হলেন না। নির্ঝরের কথা বলার ধরণই এমন। কোন ভূমিকা ছাড়া হঠাৎ কিছু নিয়ে কথা বলতে শুরু করবে। যেমনটা এখন করল। কারও বাসায় এলে দরজা খোলার পর সাধারণত অভিবাদনমূলক কিছু বলা হয়। ঘরের বাসিন্দা বলে ভেতরে আসতে। তারপর অতিথি ঘরে ঢোকে। নির্ঝর তার ধারে কাছে দিয়েও গেল না। কলিং বেল এ শব্দ করল। রা'আদ সাহেব দরজা খুললেন। আর অনুমতির অপেক্ষা না করেই মোটামুটি নির্দেশের স্বরে হাজার খানেক শব্দের একটা ছোট্ট গল্পের অনুরোধ করে নির্ঝর ঘরে ঢুকে গেল। রা'আদ সাহেব কিছু মনে করলেন না। ছেলেটার কাজকর্মই এমন। অন্যরকম! “অন্যরকম” শব্দটা আর সবাই খারাপ ব্যবহার করলেও রা'আদ সাহেব ভাল অর্থেই করেন। অন্যরকম বলেই হয়তো এত কম বয়সে একটা প্রকাশনীর কর্ণধার হতে পেরেছে। আর দশটা প্রকাশনীর মালিকরা যেখানে হয় বুড়ো-হাবড়া সেখানে নির্ঝর এখন মধ্যতরুণ। ছেলেটাকে তার বেশ ভালই লাগে। হাস্যোজ্জ্বল মুখেই উত্তর দিলেন, “আবার গল্প কীসের জন্য? আর একেবারে শব্দসংখ্যা বেধে দিয়ে?”

অসুস্থ

বাসটা প্রেসক্লাবে এসে থামল। ইয়াসিন সাহেব কপাল থেকে ঘাম মুছলেন। বাসটা মানুষে গিজগিজ করছে। ভাপসা গরমটা অসহ্য ঠেকে তার কাছে। নভেম্বর পেরিয়ে যাচ্ছে। এখনও শীত পড়ার কোন নামগন্ধ নেই।  ছোটবেলায় প্রবাদ পড়েছিলেন – উনো বর্ষায় দুনো শীত। অর্থাৎ, যেবার বৃষ্টি কম হয় সেবার দ্বিগুণ শীত পড়ে। এবার বর্ষা উনো হয়নি বরং দুনো হয়েছে। তাহলে শীত কি এবার উনো হবে? হতে পারে। হলেই বরং ভাল। অনিক একটা জ্যাকেটের জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। অবশ্য লাগার যৌক্তিক কারণও আছে। তিন বছর আগে একটা সোয়াটার কিনে দিয়েছিলেন। বর্তমানে সেটা একাধারে ছোট, পুরনো এবং ছেড়া। ছেলেটা মাত্র কলেজে উঠেছে। মাত্র কলেজে ওঠা ছেলেদের আত্মসম্মানবোধ খুব প্রবল হয়। অনিকেরও তাই। তিনি প্রথমে ‘টাকা নেই হাতে’ ঘরানার বাহানা, তার পরে হালকা ধাঁচের কিছু ধমক এবং শেষে আরেকটু শীত পড়লেই কিনে দেবার প্রতিশ্রুতি দেয়ার বিনিময়ে নিষ্কৃতি পেয়েছেন।

গল্প লেখার গল্প

“আমি বারান্দা দিয়ে সামনের পাহাড়টা দেখছি। এক কথায় অপূর্ব লাগছে। একটা ছবি তুলতে ইচ্ছে করছে খুব। কিন্তু তুলব না। কারণ আমি খুব ভাল করেই জানি, দুরে ঠায় দাড়িয়ে থাকা সবুজ পাহাড়টাকে দুরে থেকে দেখতে যতটা ভাল লাগে, তাকে ফ্রেমে বন্দি করে কাছে নিয়ে এলে লাগে ঠিক ততটাই অসুন্দর। ঠিক জীবনের মত।” এ টুকু লিখেই কালি আটকে গেল। না কালি শেষ হয়ে যায় নি। আমি নিজেই আটকে গেছি। আর কোন শব্দ মাথায় আসছে না। রৌদ্র পাশ থেকে বলল, 'তুই এখনও লিখে যাচ্ছিস?” একটু থেমে আবার বলল, “যেতে পারছিস?” “আমি লেখা বন্ধ করে রাখলে মৌমিতা সুস্থ হয়ে যাবে না।” নিঃস্পৃহ গলায় উত্তর দিলাম। রৌদ্র সম্ভবত ঝাঁঝাল কোন উত্তর দিতে চেয়েছিল। দিল না। ও নিজেও বোধ হয় কোন শব্দ খুঁজে পায়নি। এই ছোট্ট করিডোরটায় আজকে শব্দেরা বড় বেশি দুর্লভ হয়ে উঠেছে। ওদের ফিরিয়ে আনতে খুব ইচ্ছে করছে। আনতে পারছি না। মানুষ কতটা অসহায় জীব সেটা গল্পে বহুবার লিখেছি। সত্যিকার অর্থে সেটা কী, তা বুঝতে পারছি জীবনে প্রথমবার। স্রষ্টা তার সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টিকে সৃষ্টি করেছেন সবচেয়ে অসহায় করে।

চেনা অচেনা আলো আঁধারে

(১) বিকেল থেকেই টিপটিপ করে বৃষ্টি পড়ছে। আকাশের অবস্থা ভাল না। যে কোন সময় হুড়মুড়িয়ে বৃষ্টি পড়তে শুরু করবে। বেশিভাগ লোকজনই টি.এস.সির ভেতরে কিংবা কোন টংয়ের দোকানের নিচে মাথা লুকিয়েছে। শুধু নীলার মত হাতে গোনা কয়েকটা বৃষ্টিবিলাসী এখনও টি.এস.সি.র মোড়েই বসে আছে। নীলা এক্ষেত্রে আরও এক ধাপ এগিয়ে। বাকিরা বসে আছে কোন একটা গাছের তলায়। নীলা বসেছে রাজু ভাস্কর্যের নিচে। অনন্ত আকাশের নীচে মাথা লুকিয়ে। অবশ্য নীলা মোটেই কোন বৃষ্টি বিলাসী মেয়ে না। এভাবে বৃষ্টির প্রতিটা ফোঁটাকে তাকে ছোয়ার অধিকার দেয়ার কারণ ভিন্ন। নীলা কাঁদছে। সেই কান্নার জল লুকোতে নীলা তাকে মিশিয়ে দিচ্ছে বৃষ্টির সাথে।  সূর্যটা লাল হয়ে আসায়, তার আভা পড়েছে মেঘগুলোতে। রক্তলাল মেঘ। আর কিছুক্ষণ পরই আজান দেবে। নীলার সামনে একটা পেপারে ছোলা, বুট, মুড়ি, পেয়াজু, বেগুনী সাজিয়ে রাখা। দু'জনের খাবার। সেগুলোও ভিজছে। সোহেল চলে গেছে অনেকক্ষণ হল। তবু, নীলা হাকিম চত্বরের দিকে তাকিয়ে আছে। প্রতিবার মনে হচ্ছে এখনই বুঝি সেখান থেকে সোহেল দৌড়ে আসবে। এসেই স্থান-কাল-পাত্র না ভেবে তাকে জড়িয়ে ধরবে। বলবে, “নীলা, আমি যা বলেছি মিথ্যে বলেছি। তোমাকে আমি যতটা ভ...

যে ছেলেটি স্বপ্রণোদিত হয়ে ছ্যাঁকা খেয়েছিল

গল্পটার প্রথম চরিত্র আমি নিজে। অর্থাৎ, গল্পের বর্ণনাকারী। শিরোনাম দেখেই বোঝা যায়, এটা একটা ছ্যাঁকা খাবার গল্প। ও হ্যাঁ, প্রেমের ছ্যাঁকাই। সিগারেটের ছ্যাঁকা একটা ছেলে একা একা খেতে পারে। গরম খুন্তির ছ্যাঁকাও একটা মেয়ে একা একা খেতে পারে। কিন্তু, প্রেমের ছ্যাঁকার জন্য একই সাথে একটা ছেলে এবং একটা মেয়ে দরকার। ধরা যাক, মেয়েটার নাম নীতু। নীতু আমাদের কলেজের সবচেয়ে কুল, স্মার্ট, ড্যাশিং, নাইস লুকিং এবং ব্লা ব্লা ব্লা জাতীয় অন্যান্য সকল Superlative Adjective দ্বারা বিশেষায়িত মেয়ে। তার ছয় জন স্বীকৃত এবং অজস্র অস্বীকৃত বয়ফ্রেন্ড বিদ্যমান। একটু দাঁড়ান! বয়ফ্রেন্ড মানে কিন্তু, প্রেমিক নয়। বয়ফ্রেন্ড মানে হচ্ছে ছেলে বন্ধু। একটা ছেলে আর একটা মেয়ে বন্ধু হতেই পারে। তার মানে এই নয় যে, তারা প্রেম করে। বোঝা গেছে ব্যাপারটা?

কল্পনার ওপাশে

একটা মেয়ে প্রায়ই আমার কল্পনায় আসে: শ্যামলা, ছিপছিপে গড়নের। তার দীঘল চুল গড়িয়ে পড়েছে কোমর অবধি। তার পরনে থাকে একটা নীল কামিজ। গলায় একটা সবুজ ওড়না। তাকে আমি যখনই দেখি তখনই অঝোর ধারায় ধারে বৃষ্টি হতে থাকে। যেন জিউসের শাপে পৃথিবীতে আর একটি মহা প্রলয় সৃষ্টি হয়েছে। এই আর একটু পরেই ডুবতে শুরু করবে পুরো পৃথিবী। অঝোর জল তার পায়ের আঙ্গুলগুলো, ক্রমশ গোড়ালি পার হয়ে হাঁটুর দিকে লোভাতুর চোখে তাকায়। শ্রাবণের জলে ভিজে তার কামিজের নীল রং তাকে জড়িয়ে থাকে আষ্টেপৃষ্ঠে। তার সবুজ ওড়না গলায় পেঁচিয়ে থাকে আশীর মত করে। তার শরীরের প্রতিটি ভাজ আমার চোখে স্পষ্ট হয়ে ধরা দেয়। আমি মুগ্ধ বিস্ময়ে দেখে যাই। শ্রাবণের জলের মত আমিও লোভাতুর হয়ে উঠি। আমার ইচ্ছে হয় তার আরও একটু কাছে এগিয়ে যেতে। খুব একটু সাহস করে তার হাতটা ধরতে। আমার সাহস হয় না।

এখানে পৃথিবী অন্ধকার

আমি এখন একটা বিশাল কড়ই গাছের নিচে বসে আছি। আর একটু সামনে এগিয়ে বসা উচিত ছিল। ধরা পড়ার সম্ভাবনা কমে যেত। কিন্তু, পারছি না। পা দুটো পুরোপুরি অসাড় হয়ে আছে। হৃদপিণ্ডটা হাপরের মত ওঠানামা করছে। হঠাৎ রাস্তা ধরে একটা গাড়ির হেডলাইট দেখা গেল। এক মুহূর্তের জন্যে কেউ যেন আমার পায়ে ক্লোরো ইথেন স্প্রে করে দিল। সব ব্যথা ভুলে আমি আবার দৌড় দিলাম। কিন্তু, এগোতে পারলাম না। একটু পরেই নিজের পায়ের গোড়ালির সাথেই ধাক্কা লেগে পড়ে গেলাম। ওরা কি কিছু দেখতে পেয়েছে? এতো কিছু ভাবার সময় নেই। আমাকে এখন পালিয়ে থাকার ভাবনাটাই ভাবতে হবে। আপাতত বাঁচার পথ হিসেবে পাশের ডোবাটা ছাড়া কিছু দেখা যাচ্ছে না। নিজেকে রাস্তার ঢাল দিয়ে গড়িয়ে দিলাম। গড়াতে গিয়ে হঠাৎ প্রচণ্ড শক্ত কিছুর সাথে মাথায় আঘাত লাগল। প্রথমে খানিকটা রক্ত গড়িয়ে চোখের সামনে পড়ায় শুধু লাল রংটা দেখতে পাচ্ছিলাম। একটু পরে তাও পেলাম না। পুরো পৃথিবীটা অন্ধকার হয়ে এলো। 

খেয়াল

:আলোগুলো নেভাবে? আমি উত্তর দিলাম না। চুপ থাকলাম এবং। সাথে সাথে রাস্তার দুপাশে যতটা চোখ জ্বলে থাকা শত সোডিয়াম আলো নিভে গেল ঠিক যেমনটি তুমি চাইলে। রাস্তার কুকুরের হুঙ্কার থেমে গেল মুহূর্তের জন্য। হঠাৎ করে মুহূর্তের জন্য খানিকটা ভয় আর খানিকটা অনিশ্চয়তার তাদের মাঝে জায়গা করে নিল। তারপর লোডশেডিং ভেবে তারপর তারা আবার আদিম খেলায় মত্ত হল।  দেখ। এখন, ঠিক এই মুহূর্তে, এই রাত সাড়ে সাতটার পথটাকে মনে হচ্ছে ঠিক রাত দু’টো। রাস্তায় গাড়ির ভীড়টা কমে গিয়ে যদি ক্ষণিকের জন্য পুরোটা হয়ে যেত, তেপান্তরের মত ফাঁকা, আর খানিক পর পর সাই সাই করে ইলেক্ট্রিক ট্রেনের বেগে ছুটে যেত একটার পর খানিক বিরতি নিয়ে আরও একটা ট্রাক কোন সন্দেহের অবকাশ থাকত না এখন রাত দু’টো। জানো তো? সময়ের হিসেব করে আলো। সেটা পনের কোটি কিলোমিটার দুরের সূর্যালোকই হোক, কিংবা হোক ১৫ ফুট দুরে থাকা সোডিয়াম আলো। ওসব আপেক্ষিকতা, গতিবেগ, ভর সবকিছু অর্থহীণ। সময় মানেই আলো।

এক টুকরো বিষ

(১) গলার শুরুর অংশটা খুসখুস করছে। বুঝতে পারছি আবার কাশি শুরু হবে। দিচ্ছি না। ভাবে টান পড়বে। এই যৌগটার সাথে ‘ভাব মারা’র সম্পর্ক বহুদিনের। সেই চার বছর আগে ভেজা স্যাঁতস্যাঁতে ছাদে কড়ই গাছটার তুলোর মত ছায়ার নিচে প্রথম টান দিয়েছিলাম। যতটুকু নিঃশ্বাস আছে পুরোটা টেনে নিয়েছিলাম ফুসফুসে। সাথে সাথে অদ্ভুত একটা জ্বলুনি হল গলায়। মনে হল, গলার ভেতরে কে যেন অক্সি-অ্যাসিটিলিন শিখা জ্বালিয়ে দিল। চেপে রাখতে চেয়েছিলাম। পাশে সুপম বসে আছে। কাশতে দেখলে হাসাহাসি করতে পারে। কিন্তু, পারলাম না। কাশতে শুরু করলাম প্রচণ্ডভাবে। কাশির দমকে জীবনে প্রথম সুখটানে ঠিক কী অনুভূতি হয়েছিল বুঝতে পারলাম না। যদি বুঝতে পারতাম, হয়তো তা দিয়েই একটা মহাকাব্য লিখে ফেলতে পারতাম। হল না। দারুণ লজ্জা নিয়ে নিলয়ের দিকে তাকালাম। হাসল না। গম্ভীরভাবে মাথা নেড়ে বলছে, ‘প্রথমবারে এতটা টান দেয়া ঠিক হয় নি।’ বুঝলাম এমনটা হতেই পারে। সেবার গলা দিয়ে রক্ত পড়েছিল কাশতে কাশতে। তবুও, তাকে ছাড়ি নি। সার্থকতা বোধ হয় তাতে ছিল খানিকটা। 

অবশেষে শূন্যতা

====================================================== মোবাইলটা অনবরত বেজে যাচ্ছে অনেকক্ষণ ধরে। রিসিভ করছি না। ঠিক করে বলতে হলে, রিসিভ করার সাহস পাচ্ছি না। কে কল করেছে, খুব ভাল করেই জানি; প্রিয়তা। আজকে সে একটা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত চায়। সে কি জানে না, এটা আমার জীবনে সবথেকে সহজভাবে নেয়া সবচেয়ে কঠিন সিদ্ধান্ত! ====================================================== দিনক্ষণ আমার খুব ভাল মনে থাকে না। একবার একটা টেলিভিশন চ্যানেল ‘বাঙালি বাঙালিয়ানা ভুলে যাচ্ছে’ টপিকে একটা রিপোর্ট করেছিল। আমাকে এসে জিজ্ঞেস করল, ‘আজকে বাংলা কত তারিখ জানেন?’ বললাম, ‘জানি না।’ রিপোর্টারের মুখ খুশিতে উদ্ভাসিত হয়ে উঠল। আমি সাথে যোগ করলাম, ‘আমি কিন্তু আজকের ইংরেজি তারিখটাও জানি না।’ টুপ করে তার মুখে চন্দ্রগ্রহন নেমে আসল। যাই হোক, ওটা জীবনের একটা মজার এবং বিশেষত্বপূর্ণ দিন ছিল। ওটার তারিখ মনে রাখার আমি কোন প্রয়োজন বোধ করি নি। আর কবে কোন দিন আমি কুমের ওপর ব্রিজে পা ঝুলিয়ে বসে ছিলাম, সেটা মনে রাখার কোন প্রশ্নই আসে না। যে সকল পাঠক কুম শব্দটার অর্থ জানেন না তাদের জ্ঞাতার্থে জানানো যাচ্ছে, এটার অর্থ আমি ...

শোণিতাসিত

বেসিনের সামনে দাড়িয়ে আছি গত ষোল মিনিট ধরে। কেন দাড়িয়ে আছি জানি। আমি দাড়িয়ে আছি কারণ, আমি বেসিনে কী করতে এসেছিলাম ভুলে গেছি। মনে করার সহজ একটা পদ্ধতি আছে। এখন যদি আমি কাজের কথা ভুলে আবার বেডরুমের দিকে রওনা দিই, তাহলেই আমার কাজের কথা মনে পড়বে। রওনা দিচ্ছি না। মস্তিষ্কটাকে একটু শায়েস্তা করছি। শাস্তিটা হচ্ছে, তার অসাধ্য একটা কাজ তার ওপর চাপিয়ে দিয়েছি। কাজটা মনে করার কাজ। আমি খুব ভাল করেই জানি, কাজ ফেলে চলে না গেলে আমার মস্তিষ্ক কখনই সেই কাজের কথা মনে করতে পারবে না। তবুও মনে করতে চাচ্ছি। তাকে শাস্তি দিতে। অবশ্য শাস্তি কেন দিতে চাচ্ছি, তার কারণটা আমার কাছেও অজ্ঞাত। আরও ষোল মিনিট তাকে শাস্তি দেয়ার পর বেডরুমের দিকে পা বাড়ালাম। দু’পা এগোতেই মনে পড়ল। আমি বেসিনের কাছে এসেছিলাম দাঁত ব্রাশ করতে। ঘড়িতে পাঁচের কাছে থাকা ঘণ্টার কাঁটা এবং ছয়ের থেকে সামান্য এগিয়ে থাকা মিনিটের কাঁটাও তথ্যটাকে সমর্থন করল। সুতরাং, এই তথ্যটার ব্যাপারে পুরোপুরি নিশ্চিত হয়ে, আমি আবার বেসিনের দিকে পা বাড়ালাম।

লুলামি রিটার্নস

সাকিব সম্প্রতি কিঞ্চিত ক্যাচালে আছে। ক্যাচালের নাম কুলসুম; কুলসুম বানু। এই ভয়াবহুস্টিক ক্যাচাল তার গলায় মুক্তোর মালার মত যেই মহান ব্যক্তি ঝুলিয়ে দিয়েছেন, তিনি রবিন ভাই। রবিন ভাই ফেসবুকে নোট আকারে কিছুদিন পরপর চর্যাপদ টাইপের কিছু কিছু লেখা আপলোড করেন। সেই লেখার টাইটেলে থার্ড ব্রাকেটের মাঝে 'গল্প' লেখা থাকে বলে বোঝা যায় সেটা গল্প। যদি তিনি সেটা লিখে না দিতেন, তবে সেই লেখা ঠিক কী তার মর্মোদ্ধার করতে ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়কে কবর থেকে উঠে আসতে হত। সাকিবের মাঝে মাঝে মনে হয়, ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়কেও যদি কখনও রবিন ভাইয়ের লেখা পড়তে দেয়া হয়, তবে তিনিও সিদ্ধান্ত নেবেন এসব চর্যাপদেরও আগে লেখা বাংলা ভাষার আদিতম নিদর্শন। বাংলা সাহিত্য নিয়ে গবেষণার জন্য তিনি রবিন ভাইকে একুশে পদক দেয়ার প্রস্তাবও করতে পারেন। আর এখন ক্ষমতায় আছে লীগ। রবিন ভাইয়ের বাড়ি ফরিদপুর। জেলা কোটায় একুশে পদক পেয়েও যেতে পারেন। মঞ্চে উঠে রবিন ভাই ভাষণ দেবেন, “আমার এই সফলতার পেছনে যেই মহান মানুষটির চেতনা কাজ করছে, তার নাম বঙ্গবন্ধু...”।

সেফান

আমি এখন একটা লোহার থামের সাথে বাধা আছি। যে শেকলটা দিয়ে আমাকে বাধা হয়েছে, সেটা ছিঁড়তে আমার মত তের জন লাগবে। তবুও আমাকে এটা দিয়ে বাধা হয়েছে কারণ, রডরিক কোন ঝুঁকি নিতে চায় নি। ওর ধারণা, আমার গায়ে অসুরের মত শক্তি এবং লোহার শেকল ছিঁড়ে পালানোর মত ক্ষমতা আমার আছে। ধারণাটা অবশ্য আংশিক সত্যি। ঘণ্টা দু’য়েক আগেই আমি আমার খাঁচাটার লোহার শিক বাঁকা করে পালানোর চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু, দরজার লক কোডটা ভাঙ্গতে পারি নি। দুর্ভাগ্য! রডরিক এসে আমাকে দেখে ফেলে, ক্লোরোফর্ম স্প্রে করে দেয়। ঘুম থেকে জেগে আমি প্রথমে দেখলাম রডরিককেই। আমার সামনে বসে আছে। বেশ মোটা একটা রড হাতে ধরে। কয়েক সেকেন্ড পরে খেয়াল করলাম, আমি একটা লোহার থামের সাথে ইয়া মোটা শেকল দিয়ে বাধা। আমি জেগে উঠেছি খেয়াল করতেই রডরিক তার হাতের রডটা দিয়ে আমার বাম ঘাড়ের তিন আঙ্গুল উপরে শরীরের সব শক্তি দিয়ে আঘাত করল।

একদা আকাশ নীল

একদিন না'কি আকাশের রং নীল ছিল। একদিন না'কি তোমার নয়নে শ্বেত পদ্মের ঝিল ছিল। একদা চাঁদের পাশেতে তারার ফুল ছিল। সেইদিন সব রংধনু আর তুলির আঁচড় ভুল ছিল।

ওপারে

অতঃপর একদিন হেমন্তের সকল পাতাগুলো যাবে ঝরে। তখনও কি তোমার আখি জলে টলমল অশ্রুরা যাবে পড়ে? একদা সকল সুখ, ভরাবে তোমার বুক। আমি মরে গিয়ে তবে ভেসে বেড়াতে থাকব তোমার দুই নয়নে। বধু তুমি মাথা রেখো আমার বুকের সনে। মৃত ভালবাসাটুকু ধরে রেখো তব চোখে। আমার ভালবাসা তা দেখে যাব অপলকে। তুমি তোমার নয়নে অশ্রুর ভালবাসা সবটুকু রেখো ধরে। যেদিন হেমন্তের শুষ্ক পাতার মত আমি যাব মরে।

ভালবেসে দেব...

ভালবেসে অনেকটা সুখ না হোক, এক মুঠো যন্ত্রণা দেব। যন্ত্রণার রং যদি নীল হয় তবে, নীলচে একটা গোলাপই না হয় দেব। তোমার সবটুকু সুখ শুষে নিয়ে, তাতে যন্ত্রণার গহ্বর এঁকে দেব। ভালবেসে হাসি না দিতে পারি, তোমায় এক আকাশ কান্নাই না হয় দেব।

আজকের দুপুরের পর

অতঃপর আজ দুপুরের প্রবল উত্তাপে, দুটো ঠোঁটে অরুচি ধরেছে। আলতো গোলাপী রং এর দুটো ঠোঁট ছাড়া আর কিছুই রোচে না মুখে। মধ্য দুপুরের র‍োদে পুড়ে আমার সকল অনুভূতি আজ মরে গেছে। তুলতুলে হাত শক্ত করে ধরা ছাড়া আর কোন কিছু অনুভবে নেই। দশদিকে দূষিত বাতাসে আর শ্বাস নিতে ইচ্ছে নেই। কোন ইচ্ছে নেই। তোমার চুলের গন্ধ নেই যে বাতাসে, তার সবটুকু দূষিত-বিষাক্ত। আজকের দুপুরের পর আমি আর নিঃশ্বাস নিই নি। এক ফোঁটাও না। দুপুরের প্রবল সন্তাপে আমার দু'ঠোঁট পুড়ে গেছে। আজকে দুপুরে। লেবু চায়ের অদ্ভুত স্বাদ আর নেবার আকাঙ্ক্ষা নেই। কোন ইচ্ছে নেই। আজকের দুপুরের পর, নোনতা ছাড়া আর কোনই স্বাদ নেই। নেই! আজকের দুপুরের পর আমার সকল অনুভব রোদে পুড়ে গেছে।

মহাশূন্যিক

একদা নাকি আমি কোন এক নক্ষত্রের ধ্বংসাবশেষ ছিলাম। কোন এক ধূমকেতুর লেজে চড়ে, একদিন নাকি আমি আছড়ে পড়েছিলাম নীল পৃথিবীর পরে। শূন্যের অস্থিরতায় এক দিন নাকি দোদুল্যমান ছিলাম আমি। আজও অস্থির হয়ে থাকি। না হয় আবার মিলাই শূণ্যে। নক্ষত্রের অরণ্যে। নিষ্ক্রিয় মিউয়নের মাঝে দুটো ইলেকট্রন আর পজিট্রন হয়ে, মিলায়ে; বেঁচে রব প্রবল স্ফীতির সাঁঝে। তোমার হৃদয় ধারণ করে আমার হৃদয়ে, পাড়ি দেব আবার নক্ষত্রলোক। সলাজে।

আর আমি কোন কবিতা লিখিনি

অতঃপর আমি আর কোনদিন কবিতা লিখিনি। অতঃপর মোড়ে চায়ের সঙ্গে তামাক উড়িয়ে আর কোনদিন শব্দ গাঁথিনি। যেই কুকুরটা পোড়া সিগারেট বা শুকনো রুটি শুঁকে চলে যেত, তার দিকে আর তাকাই নি আমি। আমার হয়নি পড়া কুকুরের শীর্ণ চোখের অব্যক্ত ভাষা। অতঃপর আমি আর কোনদিন শুনি নি ট্রেনের আচমকা বেজে ওঠা শীৎকার। কবিতা লিখিনি, তাই আমি আর রেললাইনের পাথরে খুঁজি নি স্মৃতির আঁচড়। অতঃপর আমি আর কোনদিন পৃথিবি দেখিনি। অতঃপর আমি নিজেকে পুড়িয়ে আর কোনদিন শব্দ আঁকিনি। তামাকের সাথে আর কোনদিন পুড়ে পুড়ে পুড়ে শুদ্ধ হয়নি অনুভূতিগুলো।

নির্ঘুম অণুকাব্য! #১ #২ #৩ #৪ #৫

#১ একঘেয়ে সব আজকে রাত্রিভর। ঘুম নেই চোখে, ঘুমও স্বার্থপর। #২ আমি হব মধ্য রাতের পেঁচা, সবার শেষে রাতের স্বপ্ন করব কেনা বেচা।

শ্রাবণ #১ #২

#১ আমার সারাটা দিন, সময়টা মেঘে ঢাকা। অশ্রু বরষাহীন, নীলিমায় জল আঁকা। বৃষ্টির কাছে যত আমার রয়েছে ঋণ; সবই আজ আহত। সবটুকু একা থাকা।

মন খারাপের দল

মন খারাপের দল লুকিয়ে লুকিয়ে থাকে। খুঁজে ফিরি বারবার গলিতে, পথের বাকে। দুঃখবিলাসী আমি কোন এক প্রয়োজনে; মন খারাপের দল থাকব তোমার সনে।

শব্দ বিভীষিকা! #১ #২ #৩ #৪

#১ এখন আদৌ কিছু করছি কিনা তাও জানিনা। শুধু কিছু হলুদ আলো। ঈশ্বরের নৈঃশব্দ। আর কয়েক ফোঁটা তরল আলো। কিছু গোঙানি ... অস্পষ্ট। হঠাৎ কিছু শব্দ। প্রচণ্ড। বিভীষিকাভরা। ওরা নাকি কবিতা। তাই? এত তীব্র ওরা! যার তীব্রতায় ঈশ্বরের সকাশে তার অজ্ঞাতে ... আমি মরে গেছি।

ধরে নেয়া যাক #২ #৩ #৪ #৫

#২ ধরে নেয়া যাক, ধূসর আকাশ ঢাকা রোদ্দুরে একা থাকা— অধরাই থাক। #৩ ধরে নেয়া যাক, করে কলরব ভালবাসা সব দূরে দূরে থাক।

তুমি, তাই!

একশত একটি মেঘ আজ আকাশ থেকে এনে বৃষ্টি ঝরিয়েছি, এ পথে তুমি এসেছ, তাই। এক হাজার নীলাভ গোলাপের পাঁপড়ি দিয়ে ছেয়ে দিয়েছি রাজপথ। শুধু তুমি আসবে তাই। একটি হৃদয় কেটে সারা প্রান্তর ছেয়েছি বিশুদ্ধ ভালবাসায়। তোমায় বুকে জড়াবো, তাই।

নাগরিক অণুকাব্য #১

#১ জ্যাম আর কোলাহলে যত জেগে থাকা রাত; নগরীর পথে ঘুরে ঘুরে ফেরে অভিসম্পাত। তবু এই নগরীর এলোমেলো পথে হামাগুড়ি দেয়া ধূলোরাশি ভালবাসি।

অশ্রু #১ #২

#১ আমি তোমার চোখের এক ফোঁটা জল হব। যেই জলে তুমি বালিশ ভেজাও ; আর যতটুকু রাখো টলমলে চোখে _ আমি সেই অতলের এককোণে পড়ে রব। #২ অশ্রুজল, হলে কতটা অতল; অসীমের সীমানায়_ সম্মোহনে ডুব দেয়া যায়।

মেঘ এবং আমার কথা

সসীম আকাশ এবং তাকে ঘিরে অসীমে বিস্তৃত ধূসর ভয়ার্ত মেঘের ওড়া উড়ি। মেঘেরা আমাতে ভয় পায়। আমার কৃতঘ্নতাকে ভয় পায়। আমাতে থাকা অবিশ্বাসকে ভয় পায়। আমিও ওদের ভয় পাই। আমি ওদের দুর থেকে আরও অনেক দুর অবধি উড়ে চলাকে ভয় পাই। ঘরের কোণায় বদ্ধ হয়ে আমি অসীমের স্বপ্ন দেখতে ভয় পাই। মেঘের থেকেও উঁচুতে আবদ্ধ হয়ে আমি নীচুতলার দুঃস্বপ্ন দেখতে ভয় পাই। আমি মেঘকে ভয় পাই।

রিপোর্টিং গণতন্ত্র

নিজস্ব গণতান্ত্রিক | ১৩ / ১৩ / ১৩ | গণতন্ত্রনগর। আমি গণতন্ত্র বলছি। রিপোর্ট করছি , পড়ুন। রিপোর্ট করছি। এখানে , গণতন্ত্রনগরে আজ উজ্জাপিত হবে , ‘ পাঞ্চবার্ষিক গণতন্ত্র উৎসব’। রিপোর্ট করছি , আমি গণতন্ত্রের দেবতা। পড়ুন। আজ পাঁচ বছর পর আমার পূজো অর্চিত হবে। মন্দিরের আঙ্গিনায় সব সাংবাদিকের লাইন ধরে দাড়িয়ে যান। ক্যামেরা তাক করে রাখুন হাড়িকাঠে। আমার জন্য আজ নরবলি হবে। লাল সুরা পান করব আজ আমি। কারণ , আমি গণতন্ত্র ; মহান দেবতা।

কান্নাঘর

হ্যাঁ ! ভেতরে চলে এসো ! ঠিকই ধরেছ তুমি। আমিই কান্নাঘর। দরজা বন্ধ কর। নীরবে ; নিঃশব্দে। পিনপতন নীরবে শুরু কর সব কথা। আমি শুনছি সবই। হ্যাঁ , আমি কান্নাঘর। তোমার কান্নাদের ধারণ করি আমাতে। তোমার কষ্টগুলো বলতে এসেছ তুমি। কান্নাঘর শুনছে সব। ফেল সব জল। আমার ঘরের মেঝে সব জল শুষে নেয়। তোমার কান্নাদের এবং শব্দদের গাঁথে আমার দেয়াল নিজের মাঝে। এবং হত্যা করে বাতাস থেকে সব কম্পন।

মৃতের জন্ম

শুনেছি , বেঁচে ছিলাম , একদা কখনো নিঃসীম শূন্যতা মাঝে। আজো কানে বাজে নীরবতা মহাবিশ্বে যতটুকু আছে। শূন্যতায় শুরু হয়ে অসীমের পরে মম সত্তা ছিল একা। অনুভূতিহীন বোধ ছেয়ে রেখেছিল আমায়। স্রষ্টা র আদেশ শুনেছি আমি। অতপর আমি ধেয়ে আসি পৃথিবীর দিকে , জন্ম নিতে। অতপর ভ্রমণ এ ধূলি ধূসরিত ধরায়। শূন্যতা ছেড়ে অস্তিত্বের ভীড়ে চিনেছি আলোতে এই কালো পৃথিবীকে। এতে চিৎকারে ধিক্কার ; কাম , ক্রোধ , লোভ , পাপাচার প্রতিক্ষণে। বুঝেছি তারপর শূন্যতাতেই বেঁচেছি। জন্মে মরে গেছি।

হুমকি দিচ্ছি

হুমকি দিচ্ছি, একদা তোমার ঠোঁট থেকে সব কোমলতা খসে যাবে। শীতের তীব্র রুক্ষময়তা ছিঁড়ে ছিঁড়ে নেবে তোমার অধর। হুমকি দিচ্ছি, কোন একদিন তোমার হাসিতে টোল পড়বে না আর ওই গালে। যে হাসিতে আমি মুগ্ধ ছিলাম, সেটা আর কেউ দেখবেনা কভু। হুমকি দিচ্ছি, একদা বিকেলে গলা দিয়ে আর বেরোবে না ধ্বনি। বিকেলের রোদে সবুজ পাতার সাথে আর গাওয়া হবে না রবীন্দ্র গীতি। হুমকি দিচ্ছি, একদা তোমার হৃদ ছুঁয়ে যাবে বিষাদের ঢেউ, টলমল হবে আকাঙ্ক্ষা ভরা নীল সরোবর। হুমকি দিচ্ছি, কোন বিষণ্ণ একটি বিকেলে, হঠাৎ হুমকি ও অভিশাপের তোড়জোড়ে তুমি অনুভব করে নেবে; বুঝে যাবে, কোন একদিন নীল ভালবাসা তুমি পেয়েছিলে।

ভালবাসি তাই

ভালবাসি তাই , তোমার ঠোঁট দু’টো দেখলে আমার ইচ্ছে করে , ছিঁড়ে খুবলে ওই লালচে অধর দু’টো চিবিয়ে খেয়ে ফেলি। তোমার সবচেয়ে পবিত্র অঙ্গ থাকুক আমার পাকস্থলীতে। তার কোষগুলো লেপটে থাকুক ; আমার জিহ্বায় , দাঁতে আর ঠোঁটে। ভালবাসি তাই , তোমার বুকের দিকে তাকালে আমার ইচ্ছে করে , সেটা এফোঁড় ওফোঁড় করে হৃদপিণ্ডটা টেনে বের করে আনতে। কীভাবে আমার ভালবাসা প্রবাহিত হয় তোমার রক্তে _ তোমার অলিন্দ আর নিলয় ছিঁড়ে আমি তা বের করি।

সেদিন

যদি একদিন আমার পুনর্জন্ম হয়ে যায়; কথা দিচ্ছি ভালবাসব। সেদিন আর বলব না, কথা দিচ্ছি - আমি যে অযোগ্য, তিমিরাভ, পাপাচারী, অচ্ছুৎ, কাঙাল। সেদিন হাসনাহেনার তলায় মই লাগিয়ে, আমি বেয়ে বেয়ে উঠব চন্দ্রাবধি। তোমার ঠোঁটে সেদিন আলতো করে চুমু খাব। তোমার শ্যামরঙা গাল লাজে লাল হয়ে যাক। কিছু আসে কিংবা যায় না সেদিন। যেদিন তোমার মত আমি পূন্যবান হব।

এবারের মত বিশ্বাস করে নাও #১

এবারের মত না হয় বিশ্বাস করে নাও, তোমার জন্য, প্রবল বর্ষার মাঝেও আকাশ চিরে এনে দেব এক হাজার লাল গোলাপ। এবারের মত না হয় বিশ্বাস করে নাও, মৌচাক থেকে মালিবাগ রেলগেট অবধি ব্যস্ত সড়ক নিমেষেই ফাঁকা হবে। তোমার জন্য লাল গালিচা বিছিয়ে নীলাকাশ এক্সপ্রেস মাঝ রাস্তায় থেমে থাকবে। এবারের মত না হয় বিশ্বাস করে নাও, এখন থেকে বছরের একটি দিনও থাকবে না বৃষ্টিহীন। আশ্বিন থেকে ভাদ্র প্রতিদিন হবে ইলশেগুঁড়ি। এবারের মত না হয় বিশ্বাস করে নাও, প্রতিবার মান ভাঙ্গানোর দায়িত্ব এবার থেকে আমিই নেব। অহর্নিশ জেগে থাকব তোমার অশ্রু ঝরা রোধে। তোমায় কষ্ট দেয়ার কথা ভুলেও ভাবব না। এবারের মত না হয় সবকিছু বিশ্বাস করে, শূন্য হতে নেমে এসো। সিলিং এ ঝোলা রূপবতী লাশ ; না হয় আবার ভালবাসায় পূর্ণ হোক। বিশ্বাস কর, যদি মৌচাক থেকে মালিবাগে গোলাপ ছড়ানো লাল গালিচায় হেঁটে এসে নীলাকাশ এক্সপ্রেসে ওঠো, মৃত্যুকে ভুলে নীলাকাশের মতই ভালবাসব।

এবারের মত বিশ্বাস করে নাও

#২ না হয় এবারের মত বিশ্বাস করে নাও, যদি এই দুটো হাত ধরে_ হেঁটে চল অতীশ দীপঙ্কর সড়ক ধরে, চন্দ্রালোক আলো হয়ে নয়, সতেরই শ্রাবনের জল হয়ে, ভিজিয়ে দেবে তোমার চিবুক। হলুদ সোডিয়াম আলোয় ফুটপাত ধরে চন্দ্রালোকে ভিজে হাঁটবে কী?

শ্রাবণের অবিশ্বাস

হ্যাঁ বলেছিলাম , একদিন হব তোমার আকাশ। এবং তোমার দুই হাত শক্ত করে ধরে আর তোমার প্রশ্বাস হ্যাঁ বলেছিলাম , ছাড়ব না এই হাত কোনদিন – দিয়েছি আশ্বাস। কাউকে দিই নি আমি কখনও এক ফোঁটা কথা। তুমিই প্রথম ... এবং এটাও আমি জানতাম , তুমিই শেষের কোন নীরবতা ; দুঃসাহস আমি দেখিয়েছিলাম , যাকে কথা দিয়ে রাখার উচ্ছ্বাস।

বর্ণিল অশ্রু

অতপর সহসাই কাঁদতে শিখেছি। এখন জল গড়ায় অশ্রুগ্রন্থিহীন আমার চোখেও। অতপর আমার চোখের সবগুলো কোষ ফেটে, শ্রাবণ মেঘের মত চিৎকার করে ঝরা শিখে গেছে। বর্ণিল জলে দু'চোখ ছেয়েছে। …এবং সকল জল ছাই হয়ে উঁড়ে গেছে গাঁজার ধোঁয়ায়। উঁড়ে যাক, উঁড়ে যাক সব জল... সকল রক্ত মহাশূন্যের পায়। যন্ত্রণা আর ভালবাসা অনুভূতিদের নিয়ে দূরে, অন্য কোন মহাবিশ্বে চলে যাক উঁড়ে উঁড়ে। তরল অনুভূতিরা অধরাই থাক। না ছোঁয়াই থাক। আমার চোখের জল লুকোনোই থাক। লুকোনোই থাক। অতপর আমি কাঁদতে শিখেছি। ধোঁয়ায় উঁড়িয়ে জল লুকোতেও শিখে গেছি।

যেদিন ভালবাসবে

যেদিন ভালবাসবে, তোমার ওই ঠোঁটের সতীত্ব খসে পড়ে সেখানে জন্ম নেবে নিদারুণ উষ্ণতা। হঠাৎই অনুভব করবে তুমি দারুণ তীব্র শৈতপ্রবাহে একটু উষ্ণতার জন্য করে চলেছ সুতীব্র হাহাকার। দু’টো কামুক ঠোঁটের তীব্র আলিঙ্গনে হৃদয় কেঁপে উঠবে বারবার বারবার। যেদিন ভালবাসবে, তব নামে লেগে থাকা ‘সতী লজ্জাবতী’র অপবাদ ঘুচে যাবে। অনেকটা দূরে থাকা মানব-হৃদয়টাকে মনে হবে প্রচণ্ড চেনা অনেক দিনের। যেন ক্ষণকাল আগে অচেনা মানুষটার কাছে নিজের সবটা সঁপে দিতে এতটুকু আটকাবে না তোমার।

অবিনশ্বর

তারুণ্য এগিয়ে যেতে চায় আপন ব্রত-বীথিতে; জীর্ণ-পৃথিবী তাকে করতে চায় লক্ষ্যচ্যুত, বলে, “চেয়ে দেখ সামনে রাত নামছে; প্রহেলিকায় ঢাকা পথ, ফিরে এস জীর্ণতায়”। তারুণ্য বলে, “রাত! সে যে দিনেরই পূর্বাভাস; সূর্যাস্তই যে ঘোষণা করে আগামী দিনের সূর্যোদয়ের। ক্ষণিকের প্রহেলিকা সেথায় উড়ে যাবে কর্পূরের মত। জীর্ণতা যে কাপুরুষের বসন”। শঙ্কিত অবনী বলে, “সামনে দুর্গম অরণ্য, তার বাত্যা তোমরা চেন না; তা গ্রাস করবে তোমাদের”। তারুণ্য বলে, “কণ্টকাবৃত পথই যে চলার অহংকার! ভীরুতা যে বিপদের আশ্রয়স্থল। ঘূর্ণীবাত্যাই যে দূর করবে পথের প্রহেলিকা, উন্মোচিত হবে বিজয়ের দ্বারপ্রান্ত”।

৯৯৯

সূর্যটা তখন তোড়জোড় শুরু করেছে ঘুমোবার। খানিকটা অলস ব্যাস্ততার। তখন আমিও সময়হীন। আজ তার সাথে প্রথম দেখা করার দিন। সে আসবে বলে, আজ সারাদিন ছুইনি কোন নিকোটিন; আমাতের রাখব না কোন বিষাক্ততা। আজ তারে দেখার দিন। লিখিনি কোন কবিতা অনুভূতির নিঃশেষে। এতটা পথ হেঁটে এসে, সবটুকু উষ্ণতা জমিয়ে রেখেছি, তার ঠোঁট দু'টো ছোব বলে; রবির লালের আচলে।

যেদিন

যেদিন আমি প্রথমবার ঘাসের ওপর দিয়ে লাল সূর্য উঠতে দেখেছিলাম , যেদিন প্রথমবার কৃষ্ণ থেকে একটু একটু করে অনেকটা আলো ছড়িয়ে , আকাশের পূর্ব প্রান্তরে অদ্ভুত কোমল বিভীষিকাময় রক্তপাত হয়েছিল , আমি একটা অসম্ভব কাজ করে ফেলেছিলাম। আমি ভালবেসেছিলাম। যেদিন আমি প্রথম প্রবল প্রত্যুষে বাতাসে ভেসে চলা কুয়াশা দেখেছিলাম , যেদিন কোন এক হিম সন্ধ্যায় পাতাকুড়ানির দলের সাথে মিশে গিয়ে , শুকনো পাতার উষ্ণতায় ধোঁয়াশা আলোয় কুয়াশার্ত সকাল দেখেছিলাম , সেদিন আমি এক অদ্ভুত কাজ করে ফেলেছিলাম। আমি ভালবেসেছিলাম।

শ্রুত

#১ শোনা যায়, ভিজেছিল সে ধূসর কোন এক বরষায়। কালিমার দাগ মুছে গিয়েছিল সবুজাভ নীলিমায়। তিনতলা বাড়িটার ছাদটার কিনারায়_ ছপছপ আওয়াজে নেচেছিল জল এক মেঘবালিকার গায়। দূর থেকে অতিদূরে সে খবর শোনা যায়।

অসতী সীতা

ধরে নেয়া যাক, কবি খুঁজে যায়, বিপন্ন রাস্তায় ; ক্ষয়ে যাওয়া চাঁদ আর কবিতায়... জীবনের বোধ। দেখেছে কবিতা কবিরা দেখেনি - কবিতা লিখেছে এ অসতী সীতা। ধরে নেয়া যাক, এই ফুট পাতে ল্যাম্পপোষ্টের এই হলুদ আলোয় অসতীরা হাঁটে। বিছানায় শোয়। কবি হেঁটে যায় দূর থেকে দূর; আরও বহুদূর দূরের শব্দকে ছোঁয়ার সীমায়। ধরে নেয়া যাক, এ কাব্য কবিরা লেখেনা কলমে। সীতা লিখে যায় তার মত করে তাহার জনমে। কবি-আঙ্গিনায় সীতা এসে ঠায় নিলাজ দাঁড়ায় সেই লিখে যায়, কবিতার চেয়ে মহান সাহিত্য জীবন পাতায়।

চন্দ্রস্নাতা

তুমি কখনও চন্দ্রস্নাতা পদ্মাকে দেখেছ? আমি দেখেছি। তার রূপের বর্ণনা দেব? তুমি রম্ভার নাম শুনেছ ? তার নগ্নদেহের নৃত্য কুশলতায় , সহস্র বছর ধরে ধ্যানরত মুনি কামাবেশে সিক্ত হয়। অমরত্বের বর হেলায় তুচ্ছ করে , তুচ্ছাতিতুচ্ছ নারীদেহের সম্ভোগে লিপ্ত হয়। তার চেয়ে কামাতপ্ত সে সে চন্দ্রস্নাতার রূপ।

দ্রোহ

যখন তুমি তোমার বিলাসী গাড়িতে যাও সুরম্য প্রাসাদে কখনও কি পাশে তাকিয়ে দেখেছ? নিশ্চই নয়! আয়েসী চোঁখের দৃষ্টি পৌছায় না ওই ডাস্টবিনে তুমি দেখতে পাওনা সেখান থেকে ক্ষুধার্ত কুকুরের হিংস্র দৃষ্টি জ্বলজ্বলে দু’টি চোঁখ ক্রমাগত খুঁজে ফেরে এক টুকরো খাবার দুর থেকে দেখে মনে হয় নিকৃষ্টতম বুনো পশু। কখনও সেদিকে ভুল করেও এগিয়ে যাওনা তুমি- তবে হয়ত তুমি দেখতে পেতে ওরা মানবশিশু। তুমি নিজহাতে তাকে করে তুলেছ নিকৃষ্টতম পশু। তোমার কাছে ওরা বর্বর, হিংস্র, নৃশংস- ওরা মানুষ খুন করতে দ্বিধা করেনা দু’দশটি টাকার জন্য একমুঠো খাবারের জন্য ওরা সবকিছু করতে প্রস্তুত তুমি ওদের এড়িয়ে চল। পথের ঘৃণ্য কুকুরগুলো থেকেও যেন ঘৃণ্য ওরা তার চোঁখের তারায় মৃতপ্রায় স্বপ্ন তাতে প্রলয়ের আগুন নিশ্চই দেখনি।

কবরের ইতিকথা

এপিটাফে সেদিন ক’টা ঘাস গজাতে দেখেছিলাম। এবং... হেঁসেছিলাম। আমি ধুয়ে মুছে গেছি। কষ্ট পেতে গিয়েও পাই নি। কষ্ট পাওয়া সাজে না। গোরস্থান আজ নষ্টদের দখলে। এরপর; সময়ে সময়ে, ঘাসগুলো ফেলে; আবার দেখেছি তাতে নতুন করে রং করতে। নতুন করে মাটি ফেলে বুঝিয়ে দেয়া এখানে একটা কবর আছে। চারদিকে তার টাইলসের দেয়াল উঠল; আমার জন্য স্মৃতিসৌধ হল। সবাই আমাকে স্মরণ করল। এবং, ভুলে গেল!

অসমাপ্ত...

আকাশটা বড্ড গুমোট যেন আমার ওপর রাগ করে আছে তুমি নিভৃতে তার পানে চেয়ে আছ তুমি বললে, ‘এত গাম্ভীর্য আমার ভাল লাগে না আমি ওর মাঝের সরলতাটুকু চাই। কালো মেঘগুলোকে তুমি সরিয়ে দাও’ আমি তার মাঝে এনে দিলাম শ্রাবণ এক ঝাঁক অঝোর শীতল, স্নিগ্ধ জলকণা যাদের দ্বারা তোমার হৃদয় সিক্ত হবে আমি তবুও বলব আমার ভালবাসা অসমাপ্ত…

বিষাক্ত...!

তারপর! আমি আবার তোমার কাছে ফিরে এসেছি। সেই বালু-বেলা; সেই ঝড়; আর সেই উন্মত্ত সমুদ্রের দিশেহারা স্রোতের উন্মাতাল উল্লাস; আর সেই তুমি। সেই তোমার বিষাক্ত ঠোট।

মহনীয় কাব্য

আমি উপযুক্ত কোন শব্দ খুঁজে পাইনি যা আমার অনুভূতিকে ভাষায় রূপ দিতে পারে যা সাযুজ্য রাখতে পারে যুদ্ধের তীব্র প্রলয়ের সাথে তেমন ছন্দ আমি খুঁজে পাইনি হঠাৎ, অগ্নুৎপাতের মত শুরু হওয়া যুদ্ধ নিয়ে আমি কি করে লিখব? আমি কিভাবে অনুধাবন করতে সমর্থ হব দুইশ বছরের সুপ্ত আগ্নেয়গিরি মাত্র দুই যুগে এমন প্রলয়ের ধ্বনি উচ্চারণ করবে!

প্রিয়, মেহেদী পাতার কষ্ট

প্রিয়তা, মেহেদী পাতা দেখেছ কি? ওপরে পুলকে মত্ত শ্যামল সবুজে ঢাকা তনু হৃদয়; যেন তার শত জনমের কষ্ট বেদনা পুঞ্জিভুত হয়ে ছেয়ে যায় রুধিরে কভূ তা সইতে না পেরে উগড়ে দেয় হৃদয়ের শত দুঃখ, কষ্ট, বেদনা, বিরহের ধারা বয়ে চলে শোণিতের ধারা হয়ে ঠিক যেন আমার হৃদয়ের প্রতিচ্ছবি তোমার বিরহে প্রতিটি মুহুর্ত যেন আমার হৃদয়ের মৃত্যুক্ষন হৃদয়ের বেদনা পরিনত হয় আবীরে যে আবীরে হোলির নৃত্যানন্দ নেই জীবনের পুলকনৃত্য নেই কেবল আছে এক অসীম শূণ্যতা, অসীম বেদনা প্রিয়তা, শুনছ কি?

পাখি, আমার শব্দ নিয়ে যাও!

পাখি; তোমার ডানার মুক্ত পালকে কিংবা তোমার ঠোটে খামচে ধরে একটি বারের জন্য চিরতরে, আমার ঠোট দু’টো নিয়ে যেও। আমার ঠোঁট দু’টো আমার অভিশাপ। আমার এ রাজ্যে শব্দ নিষিদ্ধ। আমারা এ রাজ্যে অনুভূতি নিষিদ্ধ। নিষিদ্ধ যত অনুভূতি, আবেগ আর চেতনা। আমি আর কিছু বলব না। আমার ঠোঁট দু’টো তুমি নিয়ে যেও।

বিষাক্ততা...

#১ এখানে আকাশটা সবুজ এবং মৃত ঘাসফুলগুলো সবুজের অসীম তীব্রতায় শুভ্রতার পর কৃষ্ণ হতে কৃষ্ণতর হতে কৃষ্ণতম ওদের আচ্ছন্ন করে রাখে বিষাক্ততা আমি এবং আমি ওদের জড়িয়ে রাখি এবং আকাশটা এখানে অদূরে নিমজ্জিত লালের মত বিশাল যখন এই নগরের নাগরিক উপমায়, আমি বিধ্বস্ত শাপলার মত অসহায়। আমি আকাশের বুকে থাকা ঘাসফুলের সাথে কথা বলি। আমি ঘাসফুলের মাঝে থাকা বিষাক্ততার সাথে কথা বলি। এবং বিষাক্ততাকে আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকি।

সংঘাত নয় শান্তি

সম্ভবত আমি মারা গেছি। ঠিক একটু আগে। তবে আমি নিশ্চিত নই। তবে আমি নিশ্চিত আমি মারা গেছি একটু আগে। তবে, যতদুর জানি, আমি মারা গেছি বহু আগেই। আমি মারা গেছি ঠিক তখন; যখন আমি দেখেছিলাম, ওই জ্বলন্ত বাসের মধ্যে আমার ভাইকে পুড়তে। আমার ভাই মারা গিয়েছিল। এবং আমি মারা গিয়েছিলাম।

হে মহাকবি...

আমি ছিলাম তোমাতে মুগ্ধ একজন। তোমার কবিতার প্রতিটি শব্দ আমায় আচ্ছন্ন করে রাখত প্রতিটি মুহূর্ত তুমি; তোমার কবিতা; আমার কাছে ছিল মহাদেবের মতই পূজনীয় কিছু। কিংবা, অর্ফিয়াস! তার অশ্রুতপূর্ব বাঁশির তরঙ্গে, আমি মোহিত হতাম। আমি মুগ্ধ হতাম। আমি নীরবে নিভৃতে, তোমার প্রতি আমার নৈবদ্য সাজাতাম। আমার প্রতিটি শব্দ ছিল, তোমার প্রতি আমার অর্ঘ্য।

ধন্য আমি ধন্য

ধন্য আমি ধন্য                          আমি ধন্য তোমার জন্য                                                   নেই আর গৌরব আমার অন্য                          আমি ধন্য তোমার জন্য। তোমার রূপের পবিত্রতায়, অধমের এই হৃদয় রাঙায় তোমার আচলের স্নিগ্ধতায়, তোমার ভালবাসার মায়ায় আমার জীবন বাধা পড়ে, তোমার স্নেহের বাহুডোরে তোমার স্নেহের ক্রোড়ে, সে মায়ারূপ বাহুডোরে

প্রত্যাগত

এটি ছিল কয়েকটি মুহূর্ত আমার অপেক্ষা! আমি অপেক্ষা করে ছিলাম মহনীয় কোন ক্ষণের ভয়, সংশয় আর অনিশ্চয়তার দোলাচলে আমি বিভ্রান্ত ছিলাম প্রতিটি মুহূর্ত সহস্র যুগান্তর হয়ে আমার সামনে উত্থিত হচ্ছিল সে এক নিদারুণ অপেক্ষা

নিকোটিনেরা

এখানে বিষাক্ত আকাশ! বিচ্ছিন্ন ধোয়ায় আচ্ছন্ন। তার মাঝে নিকোটিনেরা খেলা করে। ঈষদচ্ছ ধোয়ারা আমার কষ্টগুলোকে বয়ে নিয়ে চলে। শরতের গোধূলির মত; এখানে মেঘগুলো; ধূসর; সাদাটে। আমি পরম মমতায় আঁকড়ে ধরি বিষাক্ততা। আমার আকাশটা বড্ড বেশি বিষাক্ত!

আমার তোমাকে প্রয়োজন

আমার তোমাকে প্রয়োজন! যা কেউ কখনো কল্পনা করতে পারে না, পুষ্পার্ঘের ব্যাপ্তি কেউ জানেনা, তা তোমার তরে সাজিয়ে রেখেছি একক অচেনা; তোমার তরে মা। আমি শুধু খুঁজে ফিরেছি তোমায়, খুঁজেই ফিরেছি আঁধার অমায়; প্রতি কণ্টকে, হাসি কান্নার বাকে, একটু স্নেহের মধুর ছোঁয়ায়, তুমি আসিয়াছ ত্রাতা-রূপে আর ভরিয়েছ হৃদ সুপ্ত ভালবাসায়। তাই তোমাকেই, শুধু তোমাকেই আমি খুঁজে ফিরি সারাক্ষণ। আমার তোমাকে প্রয়োজন!

আমি কাঁদতে পারিনি তাই

কষ্টগুলো আমি একটু একটু করে জমিয়ে রেখেছি আমার মাঝে আমার মাঝে বয়ে চলা কালবৈশাখীর একটা ঝরা পাতাও আমি প্রকাশ করিনি তার প্রতিটি ঝাপটায় আমার কুঁড়েঘর নুয়ে পড়েছে ধসে গেছে তার মাটির দেয়াল তবু কি তুমি একবারও বোঝ নি? বুঝতে পার নি আমাকে? আমার কষ্টগুলোকে- আমি কাঁদতে পারিনি তাই?

আমি কাঁদতে চাই

চোঁখ দুটো যেন আজ তৃষ্ণার্ত মরুভূমির মত এক ফোঁটা পানির জন্য হাহাকার করে ফেরে অশ্রুটুকু আজ শুকিয়ে তপ্ত এক টুকরো অনুভূতির খোঁজে আমি আজ আবার কাঁদতে চাই আমি বারবার শুধু খুঁজে ফিরেছি আমার হৃদয় যাকে আমি নিজহাতে আস্তাকুড়ে ছুড়ে ফেলেছিলাম আমি বুঝতে পারিনি নিঃসঙ্গতা কতটা ভয়াবহ আমি তাকে একটু একটু করে পুসে রেখেছিলাম তার তীব্র উত্তাপ একটু একটু করে আমার সবটুকু অশ্রু নিঃশেষ করেছে আমি তা অনুভব করতে পারিনি আমার হৃদয়ের সাথে আমি আমার সকল অনুভূতিকে হারিয়ে ফেলেছি আমি নিজ হাতে আমাকে ধ্বংস করেছি তাই আমি আজ একফোঁটা অশ্রু নিয়ে কাঁদতে চাই

ফিরে এসেছি

আমি সেই সময়ের কথা বলছি, যখন ভাগীরথীর তীর জুড়ে অস্তমিত হয়েছিল প্রভাকর; সেদিন হয়ত পলাশীর শোণিত ভাগীরথীকে রঞ্জিত করেনি, হয়ত করেছিল; লোহিত আচলে ঢেকে দিয়েছিল তাকে। তখন তোমরা নিশ্চুপ ছিলে। আমি সেই সময়ের কথা বলছি, সহস্র বিপ্লবী সেনা প্রতিরোধ করেছিল; শোষিত হয়েও তোমরা চুপ ছিলে; তাই হয়েছিলে পরাজিত। পদশৃঙ্খলকে করেছিলে আরও দৃঢ়, যা ভাঙ্গতে এক শতাব্দী লেগেছিল।

এ কোন স্বাধীনতা?

বাংলা মায়ের দামাল ছেলেরা গিয়ে সে মুক্তিরণে, দিয়েছে জীবন লড়েছে আপন মাতৃভূমির পণে, আজ সেই হৃদে গহিন কোটরে কষ্ট এবং ব্যাথা, এ কোন স্বাধীনতা? আজকে সেসব হায়েনার দল আকাশছোঁয়া প্রাসাদে, যাদের জন্ম হয়েছিল শুধু বাঙালিদের কাঁদাতে, তারাই আজকে সমাজের শির সমাজেরই দেবতা, এ কোন স্বাধীনতা?

আমি সম্রাট নই

আমি কোন সম্রাট নই, আমি কখনই বলব না, আমি তোমার জন্য গড়ে দেব নতুন এক তাজমহল। আমি তোমায় স্বরণীয় করে রাখব, শাজাহানের মত করে। আমি বলেছি আমি হুমায়ুন! সম্রাট নয়! আমি সেই হুমায়ুন যে হামিদা বানুর হাত ধরে, নিরবে নিভৃতে কল্পনা করত রাজ্য পুনরুদ্ধারের তার মাঝে কোন সম্রাট নেই। তার মাঝে আছে এক ভালবাসার পুরুষ।

নিঃসঙ্গ

আমার কাছে সার্থক কোন সূচনা নেই এক বৃত্তের মত অগোছাল জীবন কাহিনি যার শুরু বা শেষ আমি নিজেই কখনও খুঁজে পাইনি হিংস্র তরঙ্গগুলোর মাঝে নিঃশঙ্ক, একাকী এক দ্বীপের মত নিঃসঙ্গ হৃদয় ক্রমাগত অজস্র মিথ্যের আঘাতে সে আজ মৃতপ্রায় সহস্রাব্দ ধরে যেন অপেক্ষায় আছে কোন এক পথহারা তরীর নিজের মাঝে নিজেকে ক্রমশ লুকিয়ে রেখে এক উদভ্রান্ত উটপাখির মত বালুতে মাথাটুকু গুজে দিয়েছিলাম হিংস্রতায় পরিপূর্ণ হাঙ্গরের মত যখন আমায় গ্রাস করতে চেয়েছিল হীনমন্যতা আমি তার থেকে লুকিয়ে বাঁচতে চেয়েছিলাম তবু, পথ ভুল করে আমি তার আরও কাছে এসেছিলাম এক ভ্রান্তির প্রাসাদে একাকী আমি

স্বাধীনতা তুমি কি?

চেতনাটা আজ অনেক ভোঁতা হয়ে গেছে, অস্পষ্ট হয়ে গেছে স্মৃতিগুলো। কি চেয়েছিলাম আমি স্বাধীনতার কাছে? স্বাধীনতা তুমি কি? তোমার কাছে তো আমি চাইনি, কেবল একটি দিনে ভাষার মিনারে অগণিত ফুলের স্তূপ। যেখানে শ্রদ্ধার চেয়েও বড় হয়ে ওঠে লৌকিকতা, যেখানে আমি বুভূক্ষের মত খুঁজেও পাইনা তিলসম শ্রদ্ধা, তুমি কি একটি দিনের বাঙালি?

এ রায় আমি মানি না

বিচার! কিসের বিচার? কার বিচার? ওই মানুষের আবরণের নিচে লুকিয়ে থাকা মানুষ নামের পিশাচগুলোর? তুমি কি মানুষ? কোন অনুভূতি আছে তোমার? মানুষ হয়ে তুমি ভুলে গেছ তোমার ভাইয়ের বুলেটে বিদীর্ণ বুক? ভুলে গেছ তোমার বীরাঙ্গনা বোনের নিরাভরণ আর্ত-চিৎকার? দুঃখিত, আমি ভুলতে পারিনি! আমায় এখনও তাড়া করে ফেরে একাত্তরের দুঃস্বপ্নগুলো আর আমি চিৎকার করতে করতে ঘুম থেকে জেগে উঠি।

যখন আমি স্বাধীনতা শব্দটি মনে করি

যখন আমি স্বাধীনতা শব্দটি মনে করি আমার মনে পড়ে বিদ্রোহী জনতার তীব্র গর্জন এক টুকরো অধিকার পাবার আশায় অস্ত্রের সামনে নিজের বুক পেতে দেবার দুঃসাহস সূর্যসম তেজী এক ঝাঁঝাল স্লোগান আমি সেই দুঃসাহসকে নিয়ে স্বাধীনতা চাই

মৃত্যু!

তুই বারবার আমার ছোট্ট জীবনধারাটাকে তুই বারবার করে দিয়েছিস এলোমেলো বড্ড বেশি অগোছালো তুই বারবার অনেক বড় কিংবা তিল-সম ছোট আঘাতগুলো আমায় বিশৃঙ্খল করে দেয়ার পরে আমি যখন নতুন করে জীবন সাজাই তীব্র ঘূর্ণি-বাত্যার মত আমায় ধ্বংস করেছিস

মুক্ত কারাগার

সেই নির্জীব যান্ত্রিকতার মাঝে সেই অধুনা নগর-সভ্যতার তীব্র গ্লানি-মাখা এক বিবর্ণ শৃঙ্খলের মাঝে সেই নিস্পন্দ, মৃত জীবনের মাঝে যখন আমি বড় ক্লান্ত পরিশ্রান্ত আমি যখন একটি মুহূর্ত কেবল একটি ক্ষণ মুক্তি খুঁজি এই কারাগার হতে আমি তোমার কাছে ছুটে আসি।

তোকে আমার বড্ড হিংসে হয়

পাশাপাশি দু’জন হাটছি; তেপান্তরে দিগন্তের শেষ সীমায় চোঁখ রেখে মৌনতার অতল গহবরে আরোহন করে। কখনও এগিয়ে চলি দুর্দমনীয় কখনও বা হোঁচট খেয়ে পড়ি আমি বলি, ‘এপথ পেরোবার নয়’। তুই আমাকে টেনে তুলিস আমায় দিস দিক-নির্দেশনা তুই ক্লান্ত হোস মুখ থুবড়ে পড়ে থাকিস ভয়ার্ত হোস দ্বিধা আর দ্বন্দের মাজে দোদুল্যমান থাকিস তারপর আবার উঠে দাড়াস আমি অবাক চোঁখে চেয়ে দেখি অনুভব করার চেষ্টা করি তোর প্রাণশক্তিকে ব্যার্থ হই তোকে কেবলই হিংসে করে যাই

আমি কবি হতে চেয়েছিলাম।

আমি কবি হতে চেয়েছিলাম। তোমার প্রতি আমার প্রতিটি অনুভূতিকে, আমি একটির পর একটি; ক্রমাগত। চরণের প্রতিটি শব্দের প্রতিটি অক্ষরের... আমি তার গহিন-তম গহ্বরে লুকোতে চেয়েছিলাম, আমার নিযুত অনুভূতিকে। পারিনি। তা হবারই ছিল। অনুভূতির শৃঙ্খলিত বহিঃপ্রকাশই তো কবিতা। আমি আমার অনুভূতিকে কি করে শৃঙ্খলিত করব?

আমার ছোট্ট গায়

দেখে যাও এই উদাসী বনের মাঠ-দিগন্ত ছাড়িয়ে, এসো নিয়ে যাব সেথা, যেথা মন যায় সুদূরে হারিয়ে। কচি কচি ঘাসে শিশির সিক্ত মিঠেল রোদের হাসি, যাই বল ভাই সত্যি বলছি বড় বেশি ভালবাসি। গ্রীষ্ম সেথায় দাবদাহ নয় ছড়ায় মধুর মায়া! বৃক্ষ সেথায় ত্রাতারূপ হয়ে ছড়ায় শীতল ছায়া। চাতকের দল সেইখানে গায়, কোকিল-মিষ্টি গান। চৌচির মরু সেইখানে যেন পায় ফিরে তার প্রান।

একুশ আমার গৌরব নয়

একুশ আমার গৌরব নয় আমি দেখেছি, এক চিরচেনা ফাল্গুনে অচেনা পলাশের ধারা নিস্তব্ধ রাজপথে। এক চিরচেনা ফাল্গুনে অচেনা বিদ্রোহী কন্ঠস্বর, হাজার প্রাণের মাঝে। ফাল্গুনে চিরচেনা কোকিলের কর্কশ কন্ঠস্বর, অত্যাচারীর খড়গ। এক অচেনা দুপুরে, চিরচেনা মুখগুলোর করুণ আত্মাহুতি। তবু, ত্যাগীদের ভুলে গিয়ে অবিরাম গেয়ে অবিরাম গেয়ে চলা একুশের গৌরবগাথা।

কর্ণধার

হে নাবিক দেখ সামনে তোমার পর্বতসম ঢেউ; তুমি ছাড়া আজ থামাবেনা তারে কেউ। মাটি ছেড়ে আজ সংগ্রামে তুমি এই রণবীর সাজে; কর্ণকুহরে ভেরীর নিনাদ মেঘনাদ হয়ে বাজে। তবু কি তোমার ভাঙ্গবেনা ঘুম জাগবে না তবু তুমি? সাগরের এই ঝড়কে হারিয়ে যাবে কি’না তুমি ভূমি? তব ভরসায় জাহাজের যত মাঝিমাল্লার দল, হয়ে আছে নিশ্চল। তুমি না জাগলে পথহারা সব অনুসারীর কী হবে? ঝড় তাণ্ডবে নিশ্চিহ্ন নীরবে! জাগবেনা যদি কেন নিয়েছিলে কাধে এই মহাভার? এক ভুল তুমি কোরো না’ক বারবার। জেগে ওঠো তুমি সামলাও এই তরী; তখন প্রবল মাঝিদের দল যাবে না'ক নুয়ে পড়ি। বাত্যা আরও প্রকট হয়েছে ছেয়েছে অন্ধকার। বিপদের মাঝে অনুচর সব হয়েছে আজ অসাড়। তোমার আশায় বসে আছে তারা, পরিকল্পনাহীন, কোন ঋণ নেই, তবু এ তোমার অশোধযোগ্য ঋণ।

প্রতিচ্ছবি

যখন আমি সেই অনুভূতি অনুভব করলাম আমার তখন যেন কিছুই করার ছিলনা আমি আমায় ক্রমাগত ধ্বংস করছি শূণ্যতায় কেবলই যেন তখন বিভ্রান্ত ছিলাম আমি শুধুমাত্র বিভিষিকাময় মেঘ এঁকে চলেছি আমাতে কেবলই আমি ধ্বংস করছি বাস্তবতা আমার সকল অনুভূতি আর স্মৃতিগুলোকে যা কিছু আমি সৃষ্টি করেছি তোমায় ঘিরে

প্রতিদান

বিধাতা তোমার করুণা অসীম।                          দিতে পারব না প্রতিদান। ধরণীশ্রেষ্ঠ জন্মভূমিতে,                          তুমি শুনিয়েছ জীবনের গান। ফসলের পানে, পাখির কূজনে; নব জীবনের ছবি এঁকে আনে। মহা-শিল্পির তুলি দিয়ে আঁকা সে কানন, আমি দেখে যাই সারাক্ষন। আমার অজানা কোন                          পূণ্য করেছি পূর্বজন্মে আমি; তাই উজাড়িত প্রকৃতির রূপ দেখিয়েছ তুমি। যার শোভা পরে স্বর্গের রূপ,                          হয়ে যায় বড় ম্লান। বিধাতা তোমায় দিতে পারব না প্রতিদান।

আমি স্বপ্ন দেখি

তুমি বারবার আমার থেকে কেড়ে নিয়েছ আমার স্বপ্নগুলি আমি বাধা দিতে পারিনি আমি বলতে পারিনি তুমি আমার অস্তিত্ত্বকে ধ্বংস করছ আমি আমার স্বপ্নগুলোকে নিমগ্নচিত্তে সাজিয়ে রেখেছিলাম আমার কবিতাগুলোর অন্তস্থলে আমি তবু স্বপ্ন দেখি। এক দিগন্ত-বিস্তৃত সবুজাভ মাঠ- মুক্ত, অসীম আকাশের মাঝে থাকা ধূসর মেঘগুলোকে আমি সাজিয়ে দিই আমার কল্পনার সাতরঙে সবুজ আকাশের পরে আমি ভেসে যেতে দেখি লালচে মেঘ সেখানে জ্বলে থাকা তুষারশুভ্র জলকণা আমার নিরানন্দ হৃদয়কে রাঙিয়ে দেয় ইন্দ্রধনুর আলপনায় তার সবগুলো রং নিয়ে আমি স্বপ্ন দেখি।

আমায় শাস্তি দাও

আমায় শাস্তি দাও আমি আজ তোমার কাছে শাস্তি প্রার্থনা করছি আমায় তুমি ক্ষমা করোনা যদি আমার অপরাধ তোমার কাছে ক্ষমা যোগ্য হয় তবুও আমিই যে তোমার হৃদয় হতে আসা সাড়ে সাত কোটি স্পন্দনকে স্তব্ধ করে দিতে উদ্যত হয়েছিলাম নিজের জ্ঞাতসারে আমার হৃদয়ে বারবার শেল-সম এসে বিঁধেছে আমারই ছুড়ে দেয়া ছোট্ট বালুকা উদ্ভ্রান্তের মত ধ্বংস করে দিতে উদ্যত হয়েছিলাম আমার মুক্তিদাতার নশ্বর দেহের প্রতিটি অংশকে আমি বুঝতে অক্ষম ছিলাম তোমার হৃদয়ের অবিনশ্বরতা ক্ষুদ্র সময়ের মোহে উদ্ভ্রান্তের মত আমাকেই ধ্বংস করে দিতে উদ্যত হয়েছিলাম আমার কাছে আমার অপরাধ ক্ষমার অযোগ্য আমি আজ তোমার কাছে শাস্তি প্রার্থনা করছি

অর্ঘ

আমি চেষ্টা করেছি বাধতে তোমায়, আমার কবিতায়; তোমায় জানাতে সেই পথ, যা দিয়ে তুমি আমায় অনুভব করবে। হতে পারে তার অর্থটা খুবই সাধারণ, শব্দগুলো নির্বাক, তোমার জন্য অযোগ্য, তার ছন্দ আমার ভালবাসার মতই দুর্বোধ্য, তবু, তোমার সাথে সাযুজ্য রাখতে পারিনি।

একাত্তরের ঋণ

দাবী জানাতে বলছ? জানিয়েছি তো! প্রতিবাদ করতে বলছ? করেছি তো! স্লোগান দিতে বলছ? দিয়েছি তো! প্রতিবাদী গান গাইতে বলছ? গেয়েছি তো! ওসব বস্তাপচা যতসব কর্মসূচী সম্পাদিত হয়েছে বহু আগেই। হয়েছে কি কিছু? গান্ধি কিংবা লুথার কিং কাউকে কি সফলতা পেতে দেখেছ? ওরা বিখ্যাত হতে পারে। জাতিকে কিছু দিতে পারে না। চে কিংবা মুজিবকে কখনও ব্যর্থ হতে দেখেছ? যতসব দাগী সন্ত্রাসীই পেরেছে তার জাতিকে মুক্তি দিতে।